You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাতকানিয়া কলেজ মিলিশিয়া ও রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম)

সাতকানিয়া কলেজ মিলিশিয়া ও রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৫ই আগস্ট। এতে হানাদাররা পালিয়ে যায় এবং তাদের কিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
সাতকানিয়া কলেজ ছিল পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকারদের ক্যাম্প। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা অফিসারও এ ক্যাম্পে ছিল। এদের সহায়তায় ১৯৭১ সালের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য কলেজে কেন্দ্র স্থাপন করা হলে কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলাম পরীক্ষা বানচালের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ঠা আগস্ট রাত ৯টার দিকে হাবিলদার আবু মো. ইসলাম গ্রুপ, হাবিলদার আছহাব মিয়া গ্রুপ ও নায়েক সুজায়েত আলী গ্রুপ সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার খতির হাটে মিলিত হয়। তাঁরা রাত ১২টার পরে (৫ই আগস্ট) খতির হাট থেকে কলেজের নিকটবর্তী হন এবং হাবিলদার আবু মো. ইসলামের নেতৃত্বে কলেজের পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তরে পজিশন নেন। তারপর কলেজের দিকে হাবিলদার আছহাব মিয়া প্রথম ফায়ার ওপেন করার পর মুক্তিযোদ্ধারা অবিরত ফায়ার শুরু করলে কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত মিলিশিয়া ও রাজাকাররাও পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ শুরু করার অল্পক্ষণ পূর্বে ২ ট্রাক পাকিস্তানি সৈন্য কলেজে পৌঁছেছিল। তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ফায়ার শুরু করে। তবে আনুমানিক ২ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদাররা কলেজের পূর্বদিক দিয়ে পালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। হানাদাররা পালানোর সময় গুলি করলে তাতে হাবিলদার আবু মো. ইসলাম গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইসহাক) পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। হানাদাররা পালানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা কলেজে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে দেন এবং কলেজ থেকে ৩টি ওয়ারলেস সেট, ওয়ারলেস সেটের ৩টি ব্যাটারি, ১টি এসএমজি এবং ১৩টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করে গন্তব্যে প্রস্থান করেন।
এই অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল, চন্দনাইশ), হাবিলদার আছহাব মিয়া (পিতা কেরামত আলী, উত্তর গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), নায়েক সুজায়েত আলী (পিতা মফজল আহমদ, সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ), ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইসহাক, উত্তর হাশিমপুর, চন্দনাইশ), ছাবের আহমদ (পিতা গুরা মিয়া, দোহাজারী), আবুল কাশেম (পিতা মফজল আহমদ), নুরুল ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল; সেনাসদস্য), আইয়ুব আলী (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল), দুদু মিয়া (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), এস এম গফুর (পিতা ছৈয়দুল হাকিম, বরকল), মো. আবুল কাশেম (পিতা এনু মিয়া, পশ্চিম পাঠানদণ্ডি, বরকল), আবুবকর চৌধুরী (পিতা কবির আহমদ চৌধুরী, বরকল), হাবিলদার রফিফ (ছমদর পাড়া, সাতকানিয়া), ল্যান্স নায়েক নূরুল কবির (সাতকানিয়া), হারুন (দোহাজারী), সুভাষ বড়ুয়া (পুলিশ সদস্য), নুরুশ্ছফা (সাতকানিয়া; মেকানিক), আহমেদ শফি (সাতকানিয়া), আতিউর রহমান (মংশীলা), মো. ইছহাক মিয়া (পিতা মো. এনু মিয়া, পাঠানদণ্ডি, বরকল), মো. ইছহাক (পিতা আলতাপ মিয়া (উত্তর হাশিমপুর), মো. আবদুল জব্বার (পিতা দুলা মিয়া চৌধুরী, বরকল), আনোয়ারুল হক চৌধুরী (বরকল), হিম্মৎ শরীফ (কুনিরবিল, আনোয়ারা), মনছফ আলী (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), আশরাফুল আলম (পিতা এজাহার মিয়া, উত্তর হাশিমপুর), মো. রফিকুল ইসলাম (পিতা গুরা মিয়া, উত্তর গাছবাড়িয়া; সেনাসদস্য), এ কে এম হারুন (পিতা হাবিবুর রহমান, উত্তর গাছবাড়িয়া; ইপিআর সুবেদার) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!