You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.13 | সাপাহার পাকিস্তানি ক্যাম্প অপারেশন (সাপাহার, নওগাঁ) - সংগ্রামের নোটবুক

সাপাহার পাকিস্তানি ক্যাম্প অপারেশন (সাপাহার, নওগাঁ)

সাপাহার পাকিস্তানি ক্যাম্প অপারেশন (সাপাহার, নওগাঁ) পরিচালিত হয় ১৩ই সেপ্টেম্বর। এতে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ ও অনেকে আহত হন এবং ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শত্রুদের হাতে ধরা পড়েন।
সাপাহারবাসীকে পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সাপাহার ও মহাদেবপুর এলাকার ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা সাপাহারে অবস্থিত পাকবাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্প দখল করতে ঘটনার দিন রাতে আক্রমণ পরিচালনা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর মেজর রাজবীর সিং-এর নির্দেশ ও ইপিআর-এর হাবিলদার আহম্মদ উল্লাহর নেতৃত্বে ৩টি দলে বিভক্ত হন। আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি দল সাপাহার-পত্নীতলা রাস্তার মধইল ব্রিজে মাইন স্থাপন করে, যাতে শত্রুসেনারা পত্নীতলা থেকে সাপাহারে প্রবেশ করতে না পারে। অন্য দলকে সার্বক্ষণিক টহলে রাখা হয়। আর মূল দলটি অবস্থান নেয় শত্রু-ক্যাম্পের একেবারে কাছাকাছি একটি ধানক্ষেতে। সতর্কতা সত্ত্বেও রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছে যায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা-আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুসেনাদের প্রায় কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন, কিন্তু ব্রিজে মাইন বসানোর দায়িত্বে নিয়োজিত দলটি সেখান থেকে সরে গেলে পত্নীতলা থেকে অসংখ্য শত্রুসেনা আরো ভারী অস্ত্র নিয়ে সাপাহারে প্রবেশ করে। এরপর ভারী অস্ত্রের আক্রমণের মুখে এক সময় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এ-সময় লুৎফর রহমান (পিতা নজিমুদ্দীন, গানজাকুড়ী), আইয়ুব আলী (পিতা দোস্ত মোহাম্মদ, দক্ষিণ ওড়া, মহাদেবপুর), সাইফুর রহমান (পিতা খজিমদ্দীন, খাজুর, মহাদেবপুর), মনমথ মাস্টার (মাতাজীহাট রাইগা), আব্দুল হামিদসহ ১৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন। আহত হন মনছুর আলী (পিতা ইউসুফ আলী, শিরন্টি), সহরাব আলী (পিতা সদর উদ্দীন মণ্ডল, খোর্দ কালনা, মহাদেবপুর), তমসের আলী, মোজাহারুল ইসলাম, নুর ইসলাম, দলনেতা হাবিলদার মোহাম্মদ উল্লাহ, নুরুল ইসলামসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া শত্রুদের হাতে ধরা পড়েন ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। হানাদাররা আটক ৮ জনের ৪ জনকে পত্নীতলার মধইল স্কুলের ছাদে তুলে কুপিয়ে হত্যা করে লাশগুলি নিচে ফেলে দেয়। দুজনকে ধরে নিয়ে মহাদেবপুরের একটি কূপে জীবন্ত কবর দেয়। আবু ওয়াহেদ ওরফে গেটের (তিলনা) ও এস এম জাহিদুল ইসলাম (পিতা আবেদ আলী, জোয়ানপুর, উপজেলা মহাদেবপুর)-কে ধরে নিয়ে নাটোরের রাজবাড়িতে স্থাপিত জেলখানায় বন্দি করে রাখে। পরে তাঁরা জেলের তালা ভেঙ্গে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। [মো. বাবুল আকতার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড