সাদিপুর গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট)
সাদিপুর গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট) সংঘটিত হয় ৫ই এপ্রিল। এদিন সাদিপুর যুদ্ধএ পরাজয়ের পর হানাদার পাকিস্তানি সেনারা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে গ্রামবাসীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা সাদিপুর, গজিয়া, কাগজপুর প্রভৃতি গ্রামে ঢুকে বহু লোককে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
৫ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে পাকসেনারা সিলেটে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা ২২শে এপ্রিল সাদিপুরে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বিমান আক্রমণ করে। তারা বিমান থেকে তাজপুর, গোয়ালাবাজার, সাদিপুর প্রভৃতি এলাকায় বোমা হামলা করে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। এ আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত শেরপুরের দিকে পশ্চাদপসরণ করেন। এ পর্যায়ে পাকবাহিনী মাসুক আহমদ (কাগজপুর) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে। তিনি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। এ হত্যার পর তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে। সেখানে তারা যাকে পেয়েছে তাকেই ধরে নিয়ে যায়। ধৃত লোকদের মধ্যে ছিলেন আলী বক্স, বেটু মিয়া, টেনাই মিয়া, তরণীচন্দ্র বৈদ্য, খয়ের উদ্দিন চৌকিদার, লদই, আফাজ বক্স, কাছন মিয়া প্রমুখ। তাদের নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনারা সাদিপুর ফেরিঘাটে যায়। সেখানে তারা দুজন-দুজন করে সকলকে বেঁধে ফেলে। তারপর প্রতিজোড়া মানুষকে আলাদা আলাদাভাবে গুলি করে। গুলিতে আফাজ বক্স ও কাছন মিয়া ছাড়া সবাই নিহত হন। এরা দুজন গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন।
এ হত্যাযজ্ঞের পর পাকিস্তানি হানাদাররা সাদিপুর ও গজিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। তাদের ভয়ে সেখানকার অসহায় মানুষেরা হাওর, প্রান্তর আর বনজঙ্গল যে যেদিকে পারে সেদিকে পালাতে থাকে। মুহূর্তে সম্পূর্ণ এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। পলায়নকালে পাকসেনাদের গুলিতে অনেকে হতাহত হন। তাদের মধ্যে একজন গজিয়ার করম উল্লাহ। এরপর হানাদাররা সাদিপুর ও গজিয়ার বহু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড