You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.16 | সাড়ে চার আনি গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সাড়ে চার আনি গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

সাড়ে চার আনি গণহত্যা (বাগেরহাট সদর)

সাড়ে চার আনি গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় ১৬ই মে। এদিন পাকবাহিনী ও রাজাকাররা অর্ধশত সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।
২৪শে এপ্রিল পাকবাহিনী কর্তৃক বাগেরহাট শহর আক্রান্ত হওয়ার পর নাগেরবাড়ি ক্যাম্পের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এ গ্রামের মজুমদার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং গ্রামের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেন। এভাবে সুনীল মসীদ, মহাদেব মণ্ডল, বটুল মজুমদার, অনন্ত বেপারী, বীর কার্তিক, অতুল বিশ্বাস প্রমুখের নেতৃত্বে সাড়ে চার আনি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে ওঠে। বাগেরহাটের ‘রাজাকার মেজর’ নামে কুখ্যাত রজ্জব আলী ফকিরের উস্কানিতে ১৫ই মে রাজাকারদের একটি দল বাঁশবাড়িয়া আক্রমণ করলে এ প্রতিরোধ বাহিনী তাদের পরাস্ত করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন রাজাকারকার ও লুণ্ঠনকারী আহত হয়। হরেন নামে প্রতিরোধ বাহিনীর একজন সদস্যও আহত হন। রাজাকাররা আক্রান্ত হওয়ায় ১৬ই মে ভোরে রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের একটি বড় দল সাড়ে চার আনি গ্রাম আক্রমণ করে। এ আক্রমণের প্রথম শিকার হন মণীন্দ্র সমাদ্দার। পাকবাহিনীর গানবোট থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। এরপর সুতার বাড়ি ও সমাদ্দার বাড়ি লক্ষ করে গানবোট থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়। এতে শ্রীনাথ বেপারী নামে একজন মারাত্মকভাবে আহত হন। একই সময়ে নদীর পূর্ব তীর ধরে পলায়নরত সখীচরণ মসীদ ও নকুল মণ্ডল ব্রাশ ফায়ারে প্রাণ হারান। হানাদার বাহিনী মজুমদার বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। কোনো পুরুষকে পাওয়ামাত্র বেয়নেট চার্জ করে হত্যা এবং নারীদের সম্ভ্রমহানি করে। লুণ্ঠনকারীরা বিনা বাধায় পুরো গ্রামটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এদিনের গণহত্যায় নিহত ৫০ জনের মধ্যে উমাচরণ বিশ্বাস, ভবতোষ শিকদার, ধীরেন শিকদার, রামলাল শিকদার, সখীচরণ মণ্ডল, অতুল মজুমদার, হরিচরণ মণ্ডল, শিশুবর, নারায়ণ সমাদ্দার, মণীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, বীর কার্তিক, সৃষ্টিধর মণ্ডল, বিশ্বম্ভর মণ্ডল, রাধাকান্ত মিস্ত্রি, কার্তিক চন্দ্ৰ হালদার, সখীচরণ মসীদ, বিধানচন্দ্র রায়, সুরেন্দ্রনাথ মসীদ, মনোহর মসীদ, অমূল্য কুমার মসীদ প্রমুখের পরিচয় জানা গেছে। [স্বরোচিষ সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড