You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্প অপারেশন (সাঁথিয়া, পাবনা)

সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্প অপারেশন (সাঁথিয়া, পাবনা) পরিচালিত হয় দুবার – ১১ই অক্টোবর ও ২রা নভেম্বর। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা, রাজাকার ও মিলিশিয়া নিহত হয়। অপরপক্ষে বহু মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। ১১ই অক্টোবর ২০০-২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টির মধ্যে এ ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ইছামতি নদীর উত্তর পাশ, সাঁথিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশ এবং থানাসহ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে ১১:৩০টার দিকে পজিশন গ্রহণ করেন এবং রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে যাঁরা এ-যুদ্ধে অংশ নেন, তাঁরা হলেন- গোলাম মোর্শেদ মুকুল (শাহজাদপুর), মো. শাহজাহান (নাগডেমরা, ফরিদপুর), আব্দুস সামাদ (রুদ্রগাতি, সাঁথিয়া), নজরুল ইসলাম চাঁন্দু (কাশিয়াবাড়ি, সাঁথিয়া), মতিউর রহমান মতি নন্দনপুর, সাঁথিয়া), মো. মহিউদ্দিন চুন্নু (বোয়াইলমারী, সাঁথিয়া), মো. আব্দুর রউফ (নন্দনপুর, সাঁথিয়া), মো. জামায়াত আলী (দয়ারামপুর, সাঁথিয়া), মো. মকবুল হোসেন মুকুল (সাঁথিয়া বাজার) প্রমুখ। এ-যুদ্ধ প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলে। দফায়-দফায় গ্রেনেড হামলা ও ভারী অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সাঁথিয়ার সাধারণ মানুষও এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এতে আহত হন। শত্রুপক্ষের রাজাকার, মিলিশিয়া ও পাকসেনাসহ ২১ জন নিহত হয়।
যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য আলবদর, আলশামস ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মুক্তিযোদ্ধারাও এ ক্যাম্প ধ্বংস করার জন্য আরো দৃঢ় মনোবল নিয়ে নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২রা নভেম্বর রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সুপরিকল্পিতভাবে রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। তাঁরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চারদিক থেকে ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলেন। কমান্ডার লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে মতলেব উদ্দিনের বাড়ির নিকটস্থ স্কুলের দক্ষিণ পাশে, আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে ক্যাম্পের পূর্বদিকে আনু মিয়ার দোকানের পাশে, কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক মুকুলের নেতৃত্বে ক্যাম্পের উত্তর পাশে, ইছামতির ওপার জিতু দারোগার বাড়ির সামনে এবং অতিরিক্ত আরো একটি গ্রুপ আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে সাঁথিয়া থানার সামনে ক্যাম্পের পশ্চিম দিকে অবস্থান গ্রহণ করেন। এরপর গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের এলএমজি, অ্যানারগান, এসএলআর, স্টেনগান ও রাইফেল। রাজাকার বাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ-যুদ্ধ প্রায় দুঘণ্টা স্থায়ী হয়। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। তাদের মধ্যে ডেপুটি কমান্ডার আব্দুস সামাদ ফকির (পিতা বান্দাই ফকির; ফকির পাড়া, সাঁথিয়া), তফিজ মোল্লা (পিতা রবি মোল্লা; মন্মথপুর, সাঁথিয়া), আব্দুল বাতেন (পিতা শুকুর ফকির; ফকির পাড়া, সাঁথিয়া), আব্দুস সাত্তার (পিতা আওয়াল মোল্লা; নাড়িয়া গদাই, সাঁথিয়া), আকবর মৌলভী (পিতা আব্বাস মোল্লা; মন্মথপুর, সাঁথিয়া), আলিম উদ্দিন লোহাই (দক্ষিণ বোয়াইলমারী, সাঁথিয়া), লুৎফর রহমান (ছোন্দহ, সাঁথিয়া), ইসহাক (ছোন্দহ, সাঁথিয়া), সাত্তার মুন্সি (সৈয়দপুর, সাঁথিয়া), ইয়াছিন (সৈয়দপুর, সাঁথিয়া) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
সাঁথিয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সংবাদ পেয়ে শাহজাদপুরের নুরালী গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপের কমান্ডাররা সাঁথিয়ার দিকে অগ্রসর হন। তাঁরা হলেন- মো. নিজাম উদ্দিন, মো. মজিবুর রহমান, মো. আনোয়ারুল ইসলাম মিন্টু, মো. রেজাইল করিম প্রমুখ। সাঁথিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় নগরবাড়ি-বগুড়া রোডের পাশে বাঘাবাড়ির অদূরে একটি ব্রিজের কাছে পাকবাহিনী, রাজাকার ও মিলিশিয়াদের সঙ্গে তাঁদের প্রায় দুঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। পাকসেনাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কমান্ডার মো. নিজাম উদ্দিন যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারে নিয়ে যুদ্ধের স্থান ত্যাগ করেন। [মো. আবদুল মজিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!