You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক সাখাওয়াত হোসেন বাহার - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক সাখাওয়াত হোসেন বাহার

সাখাওয়াত হোসেন বাহার, বীর প্রতীক (১৯৫২- ১৯৭৬) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১১নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ও কোম্পানি কমান্ডার। তিনি ১৯৫২ সালের ৭ই আগস্ট জেলার পূর্বধলা নেত্রকোনা উপজেলার কাজলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহিউদ্দীন আহমেদ এবং মাতার নাম আশরাফুন নেসা।
৭১-এ সাখাওয়াত হোসেন বাহার নেত্রকোনা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে তিনি ছাত্র অবস্থায়ই রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিজয়, ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৭১-এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বাঙালিদের উদ্দেশে পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা’র আহ্বান ইত্যাদি ঘটনা তাঁর তরুণ মনে গভীর রেখাপাত করে। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি প্রথমে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পাকসেনারা ময়মনসিংহ দখলের জন্য অগ্রসর হলে তিনি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মধুপুর সেতুর অপর পাড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানিদের বিমান আক্রমণে তাঁদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সাখাওয়াত হোসেন বাহার ও তাঁর অনুজ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বাহার ও বেলাল মেঘালয়ের তুরায় গিয়ে ট্রেনিং সেন্টারে যোগ দেন। তাঁরা ছিলেন ঐ ট্রেনিং সেন্টারের প্রথম ব্যাচ। সেখানে দুমাসেরও অধিক সময় তাঁরা ট্রেনিং নেন বাহার জুনিয়র লিডারশিপ কোর্সে আর বেলাল বিস্ফোরক ব্যবহার বিষয়ে। প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়, যার কমান্ডার ছিলেন বাহার এবং টু-আইসি ছিলেন বেলাল। তাঁরা হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তেলিখালী যুদ্ধ। ভারতীয় বিএসএফ- এর কাভারিং গান ফায়ারের সাহায্যে তাঁরা তেলিখালী বিওপি থেকে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। জুলাই মাসে কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হালুয়াঘাটের একটি ব্রিজ বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করা ছিল বাহারের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। ঐ অপারেশনে মূল ভূমিকা পালন করেন বিস্ফোরক ব্যবহারে প্রশিক্ষিত বাহারের অনুজ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। জামালপুর সীমান্তবর্তী পাকিস্তানিদের শক্তিশালী কামালপুর ঘাঁটি দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক অপারেশনে তাঁরা দুই সহোদর সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে তাঁরা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ শহর দখলে নেয়ার পর সাভার-মিরপুর হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেন বাহারকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড