You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.05 | সাগরদিঘী যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) - সংগ্রামের নোটবুক

সাগরদিঘী যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল)

সাগরদিঘী যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ৫ই আগস্ট। সাগরদিঘী টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার ২৮ কিলোমিটার পূর্বে ধলাপাড়া ও রসুলপুর ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এটি ছিল -কাদেরিয়া বাহিনীর তিন নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। এ সেক্টরের আওতাভুক্ত এলাকা ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পূর্ব পাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং টাঙ্গাইল জেলা শহরের ঘাঁটি। এ সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স ছিল সখিপুরের বহেড়াতলীতে। পাকবাহিনী কাদেরিয়া বাহিনীর সদর দপ্তরের চারদিকে প্রায় প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাতে থাকে। মুক্তিবাহিনী সে আক্রমণ প্রতিহত করে এবং কোথাও-কোথাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। ৫ই আগস্ট পাকবাহিনী মধুপুর-ময়মনসিংহ সড়কের কাছে জলছত্র ও মুক্তাগাছা থেকে দক্ষিণে সাগরদিঘীর দিকে সৈন্য পাঠায়। তাদের এক কোম্পানি নিয়মিত সৈন্য ও শতাধিক রাজাকার সাগরদিঘী বাজারের দিকে অগ্রসর হয় এবং পথের পাশের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। এ-পথে রাঙ্গামাটিতে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি তৈরি করেছিল মুক্তিবাহিনীর ১২ নম্বর কোম্পানি। এমতাবস্থায় কোম্পানি কমান্ডার মুনীর কাদের সিদ্দিকী-র কাছে অতিরিক্ত মুক্তিযোদ্ধা চেয়ে পাঠান। কাদের সিদ্দিকী দক্ষ কমান্ডার হাকিমকে তাঁর কোম্পানি নিয়ে মুনীরের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে এক কোম্পানি মুক্তিসেনা নিয়ে হাকিম রাঙ্গামাটিতে যান এবং হানাদারদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য রাস্তার কয়েকটি স্থানে এম্বুশ করেন। ইতোমধ্যে আছিমে অবস্থানরত কমান্ডার আলী হোসেন লাল্টু নির্দেশ পেয়ে মুনীরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যান। তাঁরা সম্মিলিতভাবে রাস্তার ধারে, গাছের আড়ালে, জঙ্গলের মধ্যে, পাটক্ষেতে ও গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। কিন্তু হানাদাররা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে না এসে জঙ্গলের পূর্ব দিকের খোলা জায়গা দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। হাকিম তখন ছোট-ছোট কয়েকটি দলকে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেন। গ্রামে ঢুকে হানাদাররা যখনই কোনো বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, তখনই সেখানে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর হাতের এলএমজি গর্জে ওঠে। একই সঙ্গে কমান্ডার হাকিমের দুই ইঞ্চি মর্টার শেল থেকে গুলি বর্ষিত হয়। শত্রুসেনারা এই অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষে প্রায় তিনঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে ১০ জন পাকসেনা নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। অপরদিকে ইয়াছিন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং অপর একজন আহত হন। এছাড়া দুজন গ্রামবাসী নিহত হয়। তাদের একজন তালতলার জাবেদ আলী মন্ডল। [মো. হাবিবউল্লাহ্ বাহার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড