You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্দার ভারতের রাজনীতিবিদ সর্দার সরণ সিং

সর্দার সরণ সিং, পদ্মবিভূষণ (১৯০৭-১৯৯৪) ভারতের রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী।
সর্দার সরণ সিং ১৯০৭ সালের ১৯শে আগস্ট অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জলন্ধর জেলার শংকর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কপুরথালার নবাব জস্সা সিং আহলুওয়ালিয়া সরকারি কলেজ (রণধীর কলেজ নামেও পরিচিত) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জলন্ধরের লয়ালপুর খালসা কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে তিনি লাহোরের সরকারি আইন কলেজ ১৯৩২ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আইন পেশায় সম্পৃক্ত হন। ৩০-এর দশকে তিনি আকালি দলে যোগদান করেন এবং ৪০-এর দশকে বিশিষ্ট রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের অব্যবহিতপূর্বে তিনি পন্থিক পার্টিতে যোগদান করেন এবং দলের উপনেতা নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি পাঞ্জাব আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাঞ্জাব জোট সরকারের সংসদীয় সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে সর্দার সরণ সিং পাঞ্জাবকে বিভক্ত করার কমিটির সদস্য ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রায় ৩০ বছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪-৬৬ এবং ১৯৭০-৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ১৯৬৬-৭০ ও ১৯৭৪-৭৬ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশ-বিদেশে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি এক সময় ভারতের কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দেশ সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে ১৯৯২ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৯৪ সালের ৩০শে অক্টোবর ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার সরণ সিং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ে তিনি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সফর সঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে সেদেশের প্রতিনিধি দলের তিনি নেতৃত্ব দেন। ১২ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বাংলাদেশ সংকটের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এক দীর্ঘ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। একই বক্তৃতায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকারও সমালোচনা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ সর্দার সরণ সিং- কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!