You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.07 | সলিয়া দিঘি যুদ্ধ (ফুলগাজী, ফেনী) - সংগ্রামের নোটবুক

সলিয়া দিঘি যুদ্ধ (ফুলগাজী, ফেনী)

সলিয়া দিঘি যুদ্ধ (ফুলগাজী, ফেনী) সংঘটিত হয় ৭ই নভেম্বর। এতে ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন। সলিয়া দিঘি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় অবস্থিত। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে এতদঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এ-সময় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাই ভারত থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারী অস্ত্রসহ দেশে ফিরতে শুরু করেন।
যুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ৩রা নভেম্বর ভারতের উদয়পুরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাই কমান্ডারদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমানকে পূর্বাঞ্চলের (মুহুরী নদীর পূর্ব পাড়) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নল জাফর ইমামকে পশ্চিমাঞ্চলের (মুহুরী নদীর পশ্চিম পাড়) দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৬ই নভেম্বর ক্যাপ্টেন মাহফুজ লেফটেন্যান্ট মনসুরকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ৬টি কোম্পানিসহ অগ্রসর হয়ে সলিয়া দিঘি পর্যন্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করেন। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমাম তাঁর ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে একই তারিখে অগ্রসর হন। একই সময় লেফটেন্যান্ট মোর্শেদও একটি কোম্পানি নিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমামের সঙ্গে যোগ দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ১১তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি ৭ই নভেম্বর ভোর প্রায় ৫টার দিকে সলিয়া দিঘিতে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর আক্রমণ চালায়। তখন অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে অবস্থানরত ইপিআর হাবিলদার মো. শহীদ তাঁর সঙ্গে থাকা প্লাটুন নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের তীব্র আক্রমণে হাবিলদার শহীদসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের হাতে বন্দি হন। হাবিলদার শহীদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য হানাদার বাহিনী তাঁকে অমানুষিক নির্যাতন করে। বেয়নেটের খোঁচায় শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হলেও তাদের নিকট তিনি কোনো তথ্যই ফাঁস করেননি। কোনো তথ্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে হানাদার বাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
হাবিলদার শহীদের প্লাটুন পরাজিত হলেও সলিয়া দিঘিতে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। একই দিন বেলা ৩টার দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ২টি জঙ্গি বোমারু বিমান মুক্তিবাহিনীর অবস্থান লক্ষ করে হামলা চালাতে থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তাতে পিছু হটেননি। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি সংঘর্ষ হয়। এ-যুদ্ধে ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরবর্তীতে ৯ই নভেম্বর পুনরায় সলিয়া দিঘিতে আক্রমণ চালায়। এদিনও তারা পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড