বীর প্রতীক সাইফ উদ্দিন
সাইফ উদ্দিন, বীর প্রতীক (১৯৩৭-২০১২) হাবিলদার ও ৪নং সেক্টরের অধীন কুকিতলা সাব-সেক্টরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার দেওলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতার নাম মফিজ উদ্দিন এবং মাতার নাম আজিমন নেছা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। সাইফ উদ্দিন গফরগাঁও উপজেলার গয়েশপুর ফাযিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে গোলন্দাজ ইউনিটে যোগদান করেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে তাঁর পোস্টিং ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর সেনানিবাসে। তবে এ- সময় তিনি ছুটিতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে আহত হন এবং সুস্থ হওয়ার পর জুন মাসে ভারতে গিয়ে ৪নং সেক্টরের কুকিতলা সাব-সেক্টরে যোগ দেন। সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, বীর উত্তম এবং সাব- সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন শরিফুল হক। এ সাব-সেক্টরের অধীনে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব আর্টিলারি মুজিব ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণগুল চা বাগান, রানীগ্রামসহ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
দক্ষিণগুল চা বাগানের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। পাকবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের একাংশ এখানে একটি ঘাঁটি স্থাপন করে। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি দক্ষিণগুল চা বাগানে পাকবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ চালায়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গেলে হাবিলদার সাইফ উদ্দিন কামান থেকে গুলি ছোড়া শুরু করেন। সঠিক নিশানায় গোলা নিক্ষেপ হওয়ায় অনেক পাকসেনা হতাহত হয় ও তাদের ঘাঁটি বিধ্বস্ত হয় এবং ঘেরাওয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে ফিরে আসতে সক্ষম হন। ৭ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের উপকণ্ঠে এসে অবস্থান নেন এবং ১৬ই ডিসেম্বর তাঁরা সিলেটে প্রবেশ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হাবিলদার সাইফ উদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৬ পুত্র এবং ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড