সরচাপুর গোদারাঘাট বধ্যভূমি (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)
সরচাপুর গোদারাঘাট বধ্যভূমি (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ফুলপুর হয়ে হালুয়াঘাট পর্যন্ত একমাত্র পাকা রাস্তা ছিল ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সড়ক। কংস নদীর তীরে সরচাপুর গোদারাঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। ফুলপুর-হালুয়াঘাট থানার সীমান্তে ছিল এ ক্যাম্প। ক্যাম্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা অসংখ্য মানুষকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করে। গোদারাঘাটকে তারা বধ্যভূমিতে পরিণত করে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ইত্যাদি স্থান থেকে লোকদের আটক করে পাকসেনা ও রাজাকাররা সরচারপুর গোদারাঘাটে পাঠাত। আটককৃতদের অনেককে এখানে নির্যাতন শেষ হত্যা করা হতো। ক্যাম্পটি গোদারাঘাটে হওয়াতে বাস, ট্রাক, গরুর গাড়িসহ অন্যান্য বাহনে আসা লোকজনকে তল্লাশির নামে এখানে আটক করা সহজ ছিল। যাদের সন্দেহ হতো তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো। অসংখ্য নারীকে আটক করে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এ ক্যাম্পে। এখানে অনেকবার মায়ের সামনে মেয়ে বা মেয়ের সামনে মা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। পরাজিত পাকসেনারা ময়মনসিংহে চলে গেলে এখানকার ক্যাম্প ও বাংকারে মহিলাদের ব্যবহৃত শাড়ি, পেটিকোট, ব্লাউজ, চুড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায়।
সরচাপুর গোদারাঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ জন মানুষকে হত্যা করত। পূর্ব বাখাই ও পশ্চিম বাখাই গ্রামের ৯ জন নিরীহ মানুষকে ৪ঠা আগস্ট এখানে হত্যা করা হয়। এখানে নিহতদের মধ্যে শুধু স্থানীয় কিছু মানুষের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- এডভোকেট যতীন্দ্র চন্দ্র রায় (বওলা), হীরেন্দ্র কুমার চৌধুরী (পয়ারী), ডা. জীতেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী ওরফে লঘু চৌধুরী (পয়ারী), শান্তিপদ রায় (শ্যামপুর, কুমিল্লা), অবনী চন্দ্র ভট্টাচার্য (পোস্ট মাস্টার, পয়ারী), উপেন্দ্র চন্দ্র দে (ডাকপিয়ন, পয়ারী), নরেশ (পয়ারী), রামচরণ দে (পয়ারী), প্রিয় সাধন সরকার (পয়ারী), কালিশ চন্দ্র বণিক (পয়ারী), যুগেশ চন্দ্ৰ দাস (পূর্ব বাখাই), নিগেন্দ্র চন্দ্র দাস (পশ্চিম বাখাই), নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস (পশ্চিম বাখাই), রমণী মোহন ভদ্র (পূর্ব বাখাই), অবিনাশ চন্দ্র (পূর্ব বাখাই), ডা. নরেশ চন্দ্র দাস (পূর্ব বাখাই), উপেন্দ্ৰ চন্দ্র তালুকদার (পূর্ব বাখাই), ধীরেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার (পূর্ব বাখাই), নিগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস (পূর্ব বাখাই), ওয়াসেফ উদ্দিন মাস্টার (রাজদারীকেল), জ্ঞানেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য (রামনাথপুর, শাকুয়াই), রবেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য (রামনাথপুর), সতেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য (বাগিশপুর, শাকুয়াই) ও গোলাম মোস্তফা (তারাকান্দা)। এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড