You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.29 | সরাইল থানা অপারেশন (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

সরাইল থানা অপারেশন (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

সরাইল থানা অপারেশন (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালিত হয় ২৯শে অক্টোবর গভীর রাতে। ৫৩ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। অতর্কিত এ আক্রমণে থানায় অবস্থানরত পাকসেনা, মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করেও টিকে থাকতে পারেনি। প্রায় দুই ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর রাজাকার ও মিলিশিয়ারা পালিয়ে যায়।
অক্টোবর মাসে গেরিলা যোদ্ধারা সরাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে অবস্থান নেন। ২৯শে অক্টোবর রাতে বেড়তলার মহররম আলীর বাড়িতে তাঁদের বৈঠকে সরাইল থানা আক্রমণের পরিকল্পনা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন আবদুর রাশেদ, ননী কর্মকার, শিশু শিকদার ও মন্ত্র। পরিকল্পনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা নুরু ঠাকুর ও মহফিল সরাইল থেকে এসে তাঁদের জানান যে, ঐ রাতে একদল মিলিশিয়া থানায় অবস্থান করবে এবং সকালে তারা ধর্মতীর্থ ক্যাম্পে যোগ দেবে। ঐ রাতেই যদি অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের আক্রমণ করা যায় তাহলে সহজেই পরাজিত করা যাবে। অতএব বিস্তারিত আলোচনার পর সেদিন রাতেই থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রাশেদ ও ননী কর্মকারের দল মূল আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। আবদুর রাশেদের দল থানার পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোণ দিয়ে এবং ননী কর্মকারের দল পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ করে। শিশু শিকদারের দলটি সরাইল অন্নদা স্কুলের পূর্বদিকে অবস্থান নেয়, যাতে এদিক থেকে শত্রুরা আক্রমণ করতে এবং থানা থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। আর মন্তুর দল অবস্থান নেয় থানার নিকটবর্তী ঠাকুরবাড়ির মোড়ের দক্ষিণ দিকের পুকুরপাড়ে, যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দল আক্রান্ত হলে কভারিং ফায়ার করে তাঁদের উদ্ধার করা যায়।
আক্রমণের শুরুতেই রাশেদের দল থানার পুকুরপাড়ে ঝুলানো হাই পাওয়ারের বৈদ্যুতিক বাল্বটি গুলি করে ভেঙে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ বুঝতে পেরে সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনারা বাংকার থেকে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ শুরু করে। দুদিক থেকে আবদুর রাশেদ ও ননী কর্মকারের বাহিনীও প্রবল গুলিবর্ষণ করতে থাকে। উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাখানেক প্রচণ্ড গোলাগুলির পর পাকসেনারা ভয় পেয়ে যায় এবং মিলিশিয়া ও রাজাকাররা থানার পূর্ব দিক দিয়ে ইদন রাজাকারের বাড়ির পাশ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারপরও পাকসেনারা থানার বাংকার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে গুলিবর্ষণ করে চলে। ননী কর্মকার ও তাঁর সহযোদ্ধা আবদুল আওয়াল দুটি বাংকারে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন আহমেদ ও সামসুদ্দিন শাহ রমজান থানার পশ্চিম দিকের কাঁটা তারের বেষ্টনী ফাঁক করে থানা কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়েন। এমন সময় আবদুল আওয়াল বাংকার লক্ষ করে গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। কিন্তু তা কলাগাছে লেগে নিচে পড়ে যায়। মনির ও রমজান তা বুঝতে পেরে উল্টো দিকে ছুটে গিয়ে শুয়ে পড়েন এবং সঙ্গে-সঙ্গে তা বিস্ফোরিত হয়। গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের আঘাতে মনির ও রমজান আহত হয়ে গোঙাতে থাকেন। তাঁদের গোঙানির শব্দ শুনে আবদুর রাশেদের দল সেখানে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে রমজানকে আলীনগরে তাঁদের বাড়িতে এবং মনিরকে বেড়তলা মহররমের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ খবর পেয়ে পরদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার উদ্দিন মদন এসে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ভৈরবের পার্শ্ববর্তী আগানগরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ-যুদ্ধে পাকসেনারা হতাহত না হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। [মানবৰ্দ্ধন পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড