সরারচর পাশবিকতা (বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ)
সরারচর পাশবিকতা (বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ) কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার অন্তর্গত একটি রেলস্টেশনের নাম সরারচর। কিশোরগঞ্জ থেকে এক দল পাকিস্তানি সেনা ১৩ই মে এ স্টেশনে আসে। তারা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী শিমুলতলা, জনিদপুর, নিতারকান্দি, চন্দ্রগ্রাম ও সরারচর বাজারে হামলা চালিয়ে অনেক মানুষকে আটক, নির্যাতন, অনেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সরারচর পাশবিকতা নামে পরিচিত।
ঘটনার দিন ভোরবেলা পাকসেনারা সরারচর এসে কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। একদল পাকসেনা বলিয়ার্দি ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রাম ঘেরাও করে। তাদের অতর্কিত আক্রমণে গ্রামের মানুষ বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়। সমগ্র গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। এ গ্রামের একটি বাড়ি থেকে মুকসুদুল হাসান নামের একজনকে আটক করে। পরে হানাদার বাহিনীর ঐ দল চন্দ্রগ্রামে গিয়ে আওয়মী লীগ নেতা সদু মেম্বারের বাড়ি ঘেরাও করে। ঘরে অন্য কাউকে না পেয়ে সদু মেম্বারের চাচাতো ভাই সুরুজ মিয়াকে আটক করে। এরপর হানাদার বাহিনী নিতারকান্দি গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তি হাফেজ রমিজউদ্দিনের বাড়ি থেকে তার পুত্র এনাম উদ্দিন আহম্মদকে গ্রেফতার করে।
পাকসেনাদের অপেক্ষাকৃত বড় দলটি অতর্কিতে জনিদপুর গ্রাম ঘেরাও করে। এ গ্রাম থেকে তারা অকুতোভয় রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক অজিতকুমার রায় ও তাঁর ভাতিজা ছানা রায়কে আটক করে। এরপর হানাদাররা এ গ্রামে ব্যাপক লুটপাট চালায়। বিভিন্ন বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, অর্থ ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। এসবেই তারা সন্তুষ্ট থাকেনি। কয়েকটি বাড়িতে হানা দিয়ে মহিলাদের ধরে আনে। তারপর তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। হানাদারদের এসব বীভৎস তৎপরতায় সমগ্র এলাকার বাতাস ভারী হয় ওঠে। এসব গ্রাম থেকে আটককৃতদের হানাদাররা কিশোরগঞ্জ সদরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়।
মে মাসের শেষদিকে কিছু রাজাকারের চেষ্টায় পাকসেনারা কিশোরগঞ্জ থেকে আবার সরারচর আসে। সেদিন রাজাকার মধু মিয়ার নেতৃত্বে হানাদাররা কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীর গদিঘরে অগ্নিসংযোগ করে। ধুবি পাথর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ উদ্দিন ভূঞার গুদামঘর তারা পুড়িয়ে দেয়। অন্য হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানেও তারা অগ্নিসংযোগ করে। অনেকের ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্যে ভরা গুদামঘর ভস্মীভূত হয়। বাজারে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে নগদ অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদি তারা নিয়ে যায়। [মো. সিরাজুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড