You dont have javascript enabled! Please enable it!

সফরমালী যুদ্ধ (চাঁদপুর সদর)

সফরমালী যুদ্ধ (চাঁদপুর সদর) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের শেষদিকে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে আটক করেন এবং কয়েকটি অস্ত্র তাঁদের হস্তগত হয়।
নভেম্বর মাসের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান যে, চাঁদপুর সদর উপজেলার সফরমালীর কাছে নদীর কিনার ঘেঁষে পাকিস্তানি বাহিনীর ৬টি গানবোট চাঁদপুর থেকে উত্তর দিকে আসছে। এ সংবাদ পাওয়ার পরপরই চাঁদপুর থানা এফএফ কমান্ডার শাহ মো. মহিউদ্দিন দুলু তাঁর বাহিনী নিয়ে সফরমালীর কাছে বড় রাস্তার ধারে এম্বুশ করেন। এ-সময় সফরমালী ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাবুলের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর তাঁরা আমিরা বাজারে গিয়ে গানবোটগুলো আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে দৌড়ে যখন আমিরা বাজারের কাছাকাছি পৌঁছে, তখন হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনী টের পেয়ে যায় এবং বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে একটি গ্রুপ হলদিয়ার কাছে এবং অপরটি ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি পুকুর পাড়ে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। এফএফ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদারদের সামনের দুটি গানবোট মতলব এবং পেছনের দুটি গতি পরিবর্তন করে চাঁদপুরের দিকে চলে যায়। মাঝখানের দুটি গানবোটের একটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যে-পাড়ে ছিলেন সে-পাড়ে এসে থামে এবং অপরটি ঘুরপাক খেতে-খেতে আমিরা বাজারের উল্টোদিকে চরে গিয়ে আটকা পড়ে। অনেকক্ষণ গানবোট দুটি থেকে কোনো গুলির শব্দ না পেয়ে সহযোদ্ধাদের পজিশনে রেখে কমান্ডার শাহ মো. মহিউদ্দিন দুলু অস্ত্র নিয়ে তীরে আটকা পড়া গানবোটের ভেতরে প্রবেশ করেন। গানবোটের ভেতর আহত অবস্থায় তিনি ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে দেখতে পান এবং তাদের আটক করেন। এছাড়া কয়েকজন বাঙালিকেও দেখতে পান, যাদের কাজ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীকে ঔষধপত্র, বেতনভাতা, রেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এ লঞ্চ থেকে ২টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় অপর পাড়ের লঞ্চটিকেও টেনে আনা হয় এবং এর ভেতরে ১০-১২ জন রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা সদস্যের লাশ পাওয়া যায়। এ যুদ্ধে মোট ৭ জন পাকিস্তানি সেনাকে আটক করা হয়। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও মোহেববুল্লাহ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!