বীর প্রতীক সফিকুন নূর মাওলা
সফিকুন নূর মাওলা, বীর প্রতীক (১৯৫২-১৯৮৪) নৌকমান্ডো ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। সফিকুন নূর মাওলা (এস এন মাওলা)-র ডাকমান বুলু। তিনি ১৯৫২ সালের ৪ঠা জানুয়ারি রাজশাহী জেলার
গোদাগাড়ি উপজেলার বাসুদেব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নূর মোহাম্মদ মাওলা এবং মাতার নাম সুফিয়া বেগম। জন্ম রাজশাহীতে হলেও এস এন মাওলা ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ফটিকছড়ির শাহানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজের আইকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ফটিকছড়ির ফরিদপুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সাহসী ও রাজনীতি-সচেতন ছিলেন।
বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের পরিচালিত অত্যাচার ও গণহত্যায় বিক্ষুব্ধ হয়ে এস এন মাওলা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ২০শে এপ্রিল তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান কিছুদিন আগরতলার হরিণা ক্যাম্পে থাকার পর তিনি নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত হন। মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশিতে স্থাপিত নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিনি অন্য কমান্ডোদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অপারেশন জ্যাকপট সফল হওয়ার পর একদল নৌকমান্ডোকে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। ফারুক ই আজম, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে ২৭শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে পরিচালিত অপারেশনে এস এন মাওলা অংশগ্রহণ করেন। এ অপারেশনে সমুদ্র পথে সাঁতরে গিয়ে বহির্নোঙরে থাকা কয়েকটি জাহাজে বিস্ফোরণ ঘটানোর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সাঁতার শুরুর স্থান থেকে জাহাজগুলোর দূরত্ব পরিমাপে ভুল করা এবং প্রবল ভাটার টানে অংশগহণকারী কমান্ডোরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন পয়ে পড়েন। এক সময় এস এন মাওলাসহ ৪ জন কমান্ডো মেরিন জেটির কাছে মৃতপ্রায় অবস্থায় পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন। চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে পাকিস্তানিরা তথ্য সংগ্রহের জন্য তাঁদের ওপর আমানবিক নির্যাতন চালায়। তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে তাঁদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এখানেও তাঁদের ওপর নির্মম নির্যাতন চলে। স্বাধীনতার পর এস এন মাওলা মুক্তি পান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এস এন মাওলাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। মুক্তিযুদ্ধের দিনিগুলোর দিনপঞ্জি তিনি লিখে গেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি ওমানে দীর্ঘদিন চাকরি করেন। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জান্নাতুন নাহার মাওলা। ১৯৮৪ সালের ৫ই আগস্ট ঢাকা থেকে ওমান যাওয়ার পথে এক বিমান দুর্ঘটনায় এস এন মাওলা মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড