সমরাস্ত্র কারখানা গণহত্যা (গাজীপুর সদর)
সমরাস্ত্র কারখানা গণহত্যা (গাজীপুর সদর) সংঘটিত হয় ৩রা এপ্রিল। এ গণহত্যায় কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাসহ অনেকে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে গাজীপুরের সমরাস্ত্র কারখানাটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পাকিস্তানি বাহিনীর কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট-এর ৬নং ধারায় উল্লেখ ছিল- ‘গাজীপুর অস্ত্র কারখানা ও রাজেন্দ্রপুর অস্ত্র কারখানা রক্ষা করতে হবে।’ গাজীপুর অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি অফিসারদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তারা ঐ সমস্ত অফিসারকে হত্যার উদ্যোগ নেয়। গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানার পরিচালক ছিল পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাহ। ২৮শে মার্চ সমরাস্ত্র কারখানার বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে ময়মনসিংহের দিকে চলে যান। ২৯শে মার্চ সকালবেলা মুক্তিযোদ্ধারা সমরাস্ত্র কারখানা আক্রমণ করেন। এতে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং সমরাস্ত্র কারখানার কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক সংগ্রাম পরিষদের নেতা এস এ কে মনিরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হন। এদিন ঢাকা থেকে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাহ হেলিকপ্টারযোগে এখানে এসে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করে এবং বাঙালি অফিসারদের যার-যার কোয়ার্টার্সে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়। ৩০শে মার্চ থেকে হানাদার বাহিনী বাঙালি অফিসারদের কোয়ার্টার্সে তল্লাশির নামে মালপত্র লুট করে। ২রা এপ্রিল পর্যন্ত তাদের এ লুণ্ঠন চলতে থাকে। ৩১শে মার্চ হানাদার বাহিনী আহত সংগ্রাম পরিষদের নেতা মনিরুজ্জামানকে চিকিৎসার কথা বলে এম্বুলেন্সে করে চান্দনা চৌরাস্তায় নিয়ে হত্যা করে। ৩রা এপ্রিল ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাহ কারখানার এ কে মাহবুব চৌধুরী, মাহবুবর রহমান, আনোয়ার উদ্দিন, এখলাছুর রহমান, ফয়জুর রহমানসহ ৬ জন বাঙালি কর্মকর্তাকে ঢাকায় তলব করে। নির্দেশ মোতাবেক পরিবারবর্গসহ এ সকল অফিসার এবং প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুসকে একটি বাসে করে ঢাকা এমপি হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এমপি হোস্টেলের একটি নির্জন কক্ষে হানাদার সদস্যরা ডা. মেজর নাঈমুল ইসলাম, এ কে মাহবুব চৌধুরী, আনোয়ার উদ্দিন, এখলাছুর রহমান ও ফয়জুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে। সমরাস্ত্র কারখানা দখলের পর হানাদার বাহিনী আরো অনেককে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন- নুরুল হক, আবু সাইদ, আহমদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, বদিউল জামান, মো. ইয়াছিন, সুলায়মান চৌধুরী, ফজলুর রহমান, ফুল মিয়া, আবদুল খালেক, শহিদুল হক, বাদশা মিয়া, মো. আতাউর রহমান, মো. আব্দুল মান্নান, মো. তারিক উল্লাহ, মো. জালাল আহমেদ শেখ, মো. আনিসুর রহমান, মো. খায়রুল আলম, মো. সিদ্দিকুর রহমান খন্দকার, মো. এখলাক, নেক মোহাম্মদ প্রমুখ। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে সমরাস্ত্র কারখানায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ জনের স্মরণে তাঁদের নামাঙ্কিত একটি শিলালিপি স্থাপন করা হয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড