বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু
সত্যেন্দ্রনাথ বসু পদ্মবিভূষণ (১৮৯৪-১৯৭৪) অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী। খ্যাতনামা পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৮৯৪ সালের ১লা জানুয়ারি উত্তর কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোলকাতার হিন্দু স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯০৯), প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (১৯১১), স্নাতক (১৯১৩) এবং মিশ্র গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯১৫)। অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক (১৯১৬-২১), অধ্যাপক (১৯৪৫-৫৬) ও ইমেরিটাস অধ্যাপক (১৯৫৬), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার (১৯২১- ২৭), অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (১৯২৭-৪৫) এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৫৬-৫৮) ছিলেন। বিখ্যাত বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ও অন্যান্য বিভিন্ন তত্ত্বের কারণে তিনি খ্যাতনামা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পান। বিজ্ঞানী হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত হন (১৯৫৪)। ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় (এলাহাবাদ, যাদবপুর ও কলিকাতা) তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে (১৯৫৭)। তিনি জাতীয় অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন (১৯৫৯-৭৪) এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ খেতাব প্রদান করে (১৯৬১)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সম্মানে বোস প্রফেসর নামে একটি পদ রয়েছে। ১৯৭৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক- সমিতি গঠনের সময় ভারতের জাতীয় অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু সর্বপ্রথম এই প্রতিষ্ঠানকে অর্থসাহায্য করেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে যুগান্তর পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক বিবৃতিতে সাড়ে সাত কোটি মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে নিঃশর্ত মুক্তিদানে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান। এই বিবৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করে। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড