You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.06 | সদাশিবপুর-বাজিতপুর গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

সদাশিবপুর-বাজিতপুর গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

সদাশিবপুর-বাজিতপুর গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই অক্টোবর। এতে ১৪ জন সাধারণ মানুষ শহীদ এবং ১০ জন আহত হন।
ঘটনার দিন শ্যামপুর, মোবারকপুর, শাহবাজপুর, বিনোদপুর, মনাকষা ও দুর্ভলপুর ইউনিয়নের ব্যাপক মুক্তাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানি মেজর ইউনুস খানের নেতৃত্বে পাকসেনা, রাজাকার আলবদর বাহিনীর প্রায় ২০০ জন জওয়ান কানসাট বাজারসংলগ্ন পানি নিষ্কাশন প্রণালী পার হয়ে কালাবাড়ি দখল করে উত্তরে কয়লা দিয়াড় গ্রামের দক্ষিণ মাথায় পৌঁছায়। কিন্তু তারা এ গ্রামে প্রবেশ না করে বাঁয়ে পাগলা নদীর দিকে অগ্রসর হয়। নদী পার হয়ে গিয়ে বাজিতপুর পূর্ব চৌধুরী পাড়ায় অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আধুনিক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা কৌশলগত করণে পেছনে সরে যান। এমনি সময় হানাদার বাহিনীর হাতে মোহা. শাহাদৎ আলি মিন্টু চৌধুরী (পিতা আবুল ফজল কালু চৌধুরী, বাজিতপুর পূর্ব চৌধুরীপাড়া, কানসাট), আব্দুল বারী চৌধুরী (পিতা আবুল হোসেন চৌধুরী, ঐ), মোহা. আফতাব উদ্দীন (পিতা ডাক্তার খলিলুর রহমান, ঐ), মোহা. আলতাফ আলি (পিতা বিলাত আলি মণ্ডল, বাজিতপুর গুঁড়িপাড়া, কানসাট) ও মোহা. জাবেদ আলি (পিতা ওসমান গনি, বারোরশিয়া, শিবগঞ্জ) নামে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নিহত হন। এরপর হানাদাররা সদাশিবপুর আজগবীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এমন সময় তাদের চোখে পড়ে গ্রামবাসী বাড়িঘর ছেড়ে পশ্চিমে সদাশিবপুর গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে। তাই তারা আজগবী গ্রামে প্রবেশ না করে পলায়নরত লোকদের ধাওয়া করে।
বাজিতপুরের শেষে কানসাট-বিনোদপুর সড়ক। হানাদার বাহিনী ঐ সড়ক দিয়ে বাজিতপুর পশ্চিম চৌধুরী পাড়ার দিকে অগ্রসর হয়। এ পাড়ায় প্রবেশে করার পূর্বে তারা ডানে পশ্চিম চৌধুরী পাড়া এবং বামে সদাশিবপুর টিকোষের উত্তর পাড়ার কিছু অংশ ঘিরে ফেলে। এ পাড়া কানসাট-বিনোদপুর সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। আজগবী থেকে অগ্রসর হওয়া পাকিস্তানি সেনরা দ্রুত এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা গ্রামে প্রবেশ করার পূর্বেই সদাশিবপুর উত্তর পাড়ার ১৯-২০ জন মানুষ আত্মরক্ষার জন্য পাড়ার ওয়াকতিয়া মসজিদের কাছে জমা হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। মসজিদের বিপরীতে অবস্থিত বাড়ির এক মহিলা বাড়ির পেছনের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শত্রুসেনাদের আগমন লক্ষ করছিলেন। হানাদাররা তাকে দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা মনে করে। একজন হানাদার সৈন্য ঐ বাড়িতে প্রবেশ করে মোহা. সোহরাব আলি নামে একজনকে পেয়ে যায়। তাকে মারতে-মারতে স্লোগান দেয়া অন্য লোকজনের কাছে নিয়ে যায়। তারা তখনো স্লোগান দিচ্ছিল। সেখানে পৌছে ঐ হানাদার সৈন্য এক-এক করে সবাইকে গুলি করে। তারা সকলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ-সময় মেজর ইউনুস খান তার সৈন্যদের নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এরপর স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখেন ৯ জন নিহত এবং ১১ জন আহত অবস্থায় পড়ে আছে। নিহত ও আহত সকলেই সদাশিবপুরের অধিবাসী। নিহতরা হলেন- মোহা. সোহরাব আলি (পিতা মোহা. আরজেদ আলি), মোহা. ”বেলাল উদ্দীন (পিতা শের মোহাম্মদ মণ্ডল), মোহা. দাউদ আলি ওরফে ঝাটু মাঝি (পিতা মোহা. জোহাক মণ্ডল), মোহা. আব্দুল আজিজ শাহু (পিতা মোহা. সোলায়মান মণ্ডল), মোহা. জহির উদ্দীন গুণ্ডি (পিতা মোহা. সহিমুদ্দীন মণ্ডল), মোহা. তাজেরুল ইসলাম (পিতা মোহা. এমাজ উদ্দীন), মোহা. নজরুল ইসলাম পোলাদ (পিতা মোহা. রইস উদ্দীন), মোহা. আলতাফ হোসেন (পিতা মোহা. তাজবুল হক) এবং মোহা. মোজাহার আলি (পিতা মোহা. তাজবুল হক)।
আহত ১১ জনের মধ্যে ১০ জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— মোহা. সাইদুর রহমান লাড্ডু মেম্বার (পিতা মোহা. দাউদ আলি), মোহা. মঞ্জুর আলি (পিতা মোহা পাতু মণ্ডল), মোহা. নজরুল ইসলাম (পিতা মোহা. ইয়াসিন আলি), মোহা. লুৎফল হক (পিতা মোহা. হানিফ মণ্ডল), মোহা. ইসরাইল আলি (পিতা মোহা. তালেব মণ্ডল), মোহা. একরামুল হক (পিতা মোহা. তফিজুল্লাহ মণ্ডল), মোহা. হুমায়ুন আলি (পিতা মোহা. সহিমুদ্দিন), মোহা. আজাহার আলি (পিতা মোহা. কাওসার আলি) ও মোহা. জাহির উদ্দিন (পিতা কাওসার আলি), মোহা. নাদের আলি (পিতা মোহা. সাগর আলি)। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড