শ্রীঅঙ্গন গণহত্যা (ফরিদপুর সদর)
শ্রীঅঙ্গন গণহত্যা (ফরিদপুর সদর) সংঘটিত হয় ২১শে এপ্রিল। এতে ৮ জন সাধু হত্যার শিকার হন।
ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকায় শ্রী জগবন্ধু সুন্দরের স্মৃতিতে স্থাপিত ‘শ্রীঅঙ্গন’ নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২১শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফরিদপুর শহরে প্রবেশ করলে ভয়ে কয়েকজন সাধু শ্রীঅঙ্গন ত্যাগ করেন। কিন্তু ৯ জন সাধু থেকে যান। সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনারা কয়েকজন বিহারি সহযোগীকে নিয়ে শ্রীঅঙ্গনে চড়াও হয়। তারা সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে মন্দিরের সামনে আসে। সাধুরা তখন এক ধ্যানে ‘জয় জগবন্ধু’ ‘জয় জগবন্ধু’ জপ করছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের মনে হয় তারা ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম জপছেন। এরূপ ভেবে তারা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। ৪ জন পাকসেনা মন্দিরের ভেতর থেকে ৮ জন সাধুকে টেনেহিঁচড়ে মন্দির সংলগ্ন চালতে গাছের নিচে নিয়ে যায়। একজন পাকসেনা সেখানে আগে থেকেই পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সাধুদের সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। তারপর গুলির শব্দ। সাধুদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘জয় জগবন্ধু হরি! জয় জয় জগবন্ধু হরি’। এরপর আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ব্রহ্মচারীরা। থেমে যায় কীর্তন:
হরি পুরুষ জগদ্বন্ধু মহাউদ্ধারণ
চারি হস্ত চন্দ্র পুত্র হা কীট পতন।
শ্রীঅঙ্গনের পোষা ৮টি কুকুর তখন আর্তচিৎকার করতে থাকে। ছুটে যান স্থানীয় একজন পূজারী হরিবল। স্বচক্ষে দেখেন লাশগুলো। রক্তে তখন একাকার চালতেতলা। রবিবন্ধু ব্রহ্মচারীর প্রাণ তখনো যায়নি। তাঁর মুখে গুলি লেগে জিহ্বা বেরিয়ে এসেছিল। জিহ্বা নড়ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নবকুমার ব্রহ্মচারী নামে একজন বৃদ্ধ সাধু সিঁড়িকোঠার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি বেঁচে যান।
মৃত্যুবরণকারী সাধুরা হলেন- কীর্তনব্রত ব্রহ্মচারী, নিদানবন্ধু ব্রহ্মচারী, অন্ধকানাই ব্রহ্মচারী, বন্ধুদাস ব্রহ্মচারী, ক্ষিতিবন্ধু ব্রহ্মচারী, গৌরবন্ধু ব্রহ্মচারী, চিরবন্ধু ব্রহ্মচারী ও রবিবন্ধু ব্রহ্মচারী। কেবল হত্যা নয়, পাকসেনারা পরে ডিনামাইট দিয়ে শ্রীঅঙ্গনের সুবিশাল চূড়ার উপরিভাগ গুঁড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিরা অনেক মূল্যবান সম্পদ ও অর্থকড়িও লুট করে নিয়ে যায়। [আবু সাঈদ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড