শ্রীপুর গণহত্যা (দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ)
শ্রীপুর গণহত্যা (দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৪ই নভেম্বর। এতে ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসী নির্মম হত্যার শিকার হন। ২ জন নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার পাণ্ডারগাঁও ইউনিয়নের একটি গ্রাম শ্রীপুর। দেখার হাওড়ের পূর্বপাড়ে সুরমা নদী থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এ গ্রামটি ছিল খুবই দুর্গম। এ গ্রামের মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ ও মাছধরা এবং সবাই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। সেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টর কমান্ডার এ এস হেলাল উদ্দিন এ গ্রামে অবস্থান করে আশপাশের এলাকায় অপারেশন চালাতেন। শ্রীপুর গ্রামবাসী আগ্রহ সহকারে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এ গ্রামের ইজ্জত আলী তার দুটি ঘর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেন। এ বিষয়গুলো পাকবাহিনীর কাছে গোপন থাকেনি। রাজাকারদের মাধ্যমে তারা এ সংবাদ জানতে পেরে ১৪ই নভেম্বর হেলিকপ্টারে গ্রামটি রেকি করে এবং একই দিনে ছাতক হানাদার ক্যাম্প থেকে নৌকাযোগে পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে এসে শ্রীপুর গ্রামটিতে গণহত্যা চালিয়ে শিশুসহ ১১ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রীপুর গণহত্যায় শহীদরা হলেন— রাকেশ নমঃশূদ্র, দয়াময় নমঃশূদ্র, নরেন্দ্র নমঃশূদ্র, দর্পহরি নমঃশূদ্র, পীতাম্বর নমঃশূদ্র, উকিল আলী, মনফর আলী (পিতা আয়ুব আলী), রোকেয়া বেগম (পিতা মনফর আলী), সুরুজ আলী (পিতা আলিম উল্লা), গুলনাহার বেগম ও গুলনাহারের কন্যা। এছাড়াও হরমুজ আলী (পিতা আয়ুব আলী) নামে একজন কৃষক হত্যার শিকার হয়। এদিন হানাদাররা শ্রীপুরের পাশে আফসারনগরে ৪ জন এবং পলিরচর গ্রামের ২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা পলিরচর গ্রামের ২ জন মহিলার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। মছদ্দর আলী নামে এক ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করলে পাকবাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। তারা শ্রীপুর, আফসারনগর ও পলিরচর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড