You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ বধ্যভূমি (শ্রীপুর, গাজীপুর)

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ বধ্যভূমি (শ্রীপুর, গাজীপুর) শ্রীপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি। ১৭ই জুন থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বধ্যভূমিতে হানাদার বাহিনী নির্যাতন শেষে কয়েক শত মানুষকে হত্যা করে।
১৮ই এপ্রিল পাকবাহিনী রেলযোগে সর্বপ্রথম শ্রীপুরে অনুপ্রবেশ করে শ্রীপুর থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে তারা শ্রীপুর হাইস্কুল মাঠ, গোসিংগা রাজকাচারি, কাউরাইদ স্টেশন, সাতখামাইর স্টেশন, গাজীপুর স্টেশন ও গোলাঘাট পুলপারে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। উপজেলার শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের বর্তমান অনার্স ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বের ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত নিচু জায়গাটি হানাদাররা বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করত। ১৭ই জুন থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার উজিলাব, কেওয়া, সাতখামাইর, গোসিংগা, ভাংনাহাটিসহ অন্যান্য গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার এবং তাদের দালালদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, মুক্তিকামী যুবক ও যুবতি নারীদের ধরে এনে শ্রীপুর হাইস্কুল পাকসেনা ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও পাশবিক অত্যাচার শেষে নারী ও পুরুষদের শ্রীপুর কলেজের দক্ষিণ পাশে নিচু জায়গাটিতে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে লাশগুলো এখানে পুঁতে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখত। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এ বধ্যভূমিতে হানাদার বাহিনীর হাতে কয়েক শত মানুষ শহীদ হন। দূর-দূরান্ত থেকে ধরে আনা সকল শহীদের পরিচয় জানা যায়নি। যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— আলমগীর বাদশা আকন্দ (পিতা দরবেশ আহাদ আলী আকন্দ, কেওয়া), ওমর আলী প্রধান (পিতা ছাবেদ আলী প্রধান, উজিলাব), আ. ছামাদ (পিতা আ. হেকিম, উজিলাব), লিয়াকত আলী মিঞা (পিতা মনোরউদ্দিন, উজিলাব), আ. ছাত্তার ভাঙ্গী (পিতা মেহের ভাঙ্গী, কেওয়া), আ. খালেক পালোয়ান (পিতা নজর আলী পালোয়ান, কেওয়া), শুক্কুর আলী (পিতা রুস্তম আলী, ভাংনাহাটি), আ. লতিফ (পিতা খলিল শেখ, সাতখামাইর), আব্দুস ছাত্তার (পিতা উবেদ উল্যাহ, সাতখামাইর), ষোড়শী ছালেহা বেগম (পিতা ছমেদ আলী, টেংরা, তেলিহাটি), ষোড়শী শিরিন আক্তার (পিতা মনসুর আলী আকন্দ, সাতখামাইর), সিরাজ উদ্দিন (পিতা রহম আলী আকন্দ, পেলাইদ, গোসিংগা), আফাজ উদ্দিন আকন্দ (পিতা আমীর উদ্দীন আকন্দ, কর্নপুর, গোসিংগা), মাইন উদ্দিন খন্দকার (খিলপাড়া, গোসিংগা) ও আ. রশীদ সরকার (পিতা নোয়াব আলী সরকার, খিলপাড়া, গোসিংগা)।
এ বধ্যভূমির শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মো. জামিল হাসান দুর্জয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। প্রতিবছর ২৫শে মার্চ এ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে সকল শহীদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। [মো. নূরুন্নবী আকন্দ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!