মুক্তিযুদ্ধে শ্রীমঙ্গল উপজেলা (মৌলভীবাজার)
শ্রীমঙ্গল উপজেলা (মৌলভীবাজার) ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শ্রীমঙ্গল থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ কে লতিফুর রহমান চৌধুরী (কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী) এমএনএ এবং আলতাফুর রহমান চৌধুরী এমপিএ নির্বাচিত হন। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশের মতো শ্রীমঙ্গলের আনাচে-কানাচেও এ বিক্ষোভ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর শ্রীমঙ্গলে এ আন্দোলন তীব্র রূপ লাভ করে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, আদালত, চা-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়।
২৩শে মার্চ শ্রীমঙ্গল থানা থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এম এ রহিম, একরাম হোসেন চৌধুরী, বিরাজ সেন তরুণ, মঈনউদ্দিন, সৈয়দ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। ২৫শে মার্চ ঢাকার গণহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীমঙ্গলের গ্রাম-গঞ্জে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৭শে মার্চ কলকাতা বেতার থেকে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর আক্রমণের খবর প্রচারিত হলে এর প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গল শহরে জনতার ঢল নামে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা হলেন— এম এ রহিম, এম এ মান্নান, সৈয়দ মুজিবুর রহমান, শহীদুল আলম, রাসেন্দ্র দত্ত, বিমলজ্যোতি চৌধুরী (ননী চৌধুরী), ডা. আব্দুল আলী, আলতাফুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতলিব, বিরাজ সেন তরুণ, দীপক সেন, মঈন উদ্দিন, এম এ ইলিয়াস, সি আর দত্ত, মাহবুব এলাহী, গিয়াস উদ্দিন, তোয়াবুর রহমান ও মোহনলাল সোম প্রমুখ।
২৭শে মার্চ থেকে এম এ মোছাব্বির, ক্যাপ্টেন মোতালিব, এম এ রহিম, শহীদুল আলম প্রমুখ শ্রীমঙ্গল থানার বিভিন্ন গ্রাম ও চা-বাগানের তরুণ ও শ্রমিকদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়াড গঠন করেন। এ কাজে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আরজু মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা গঙ্গেশ দেবরায় ও বাহার আলী মাস্টার সহযোগিতা করেন। ২৮শে মার্চ টাউন হলে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগ্রাম পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব মো. ইলিয়াস ও আলতাফুর রহমান চৌধুরীকে প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা- খাওয়ার বিষয়ে সাহায্য করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন ফরিদ আহমদ চৌধুরী, ডা. আব্দুল আলী, মুহিবুর রহমান, কমলেশ ভট্টাচার্য এবং সৈয়দ মুজিবুর রহমান।
এ-সময় কর্নেল (অব.) আব্দুর রব (হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমএনএ এবং পরে চিফ অব স্টাফ), ডা. আব্দুল আলী, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ সীমান্তবর্তী ইপিআর জওয়ানদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁরা ইপিআর-এর অবাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করারও ব্যবস্থা করেন। অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আব্দুল লতিফ চৌধুরী ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল মাঠে উৎসাহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। এম এ মোসাব্বির মুজাহিদ বাহিনীকে পৌরসভা মাঠে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তেলিয়াপাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰে শ্রীমঙ্গল থেকে প্রথম ব্যাচে এম এ মান্নান, আশরাফুল আলম, বিরাজ সেন তরুণ এবং বাবলা চৌধুরী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে ভারতের লোহারবন্দে এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার্স), এমএফ (মুক্তিফোর্স), ইপিআর-আর্মি-পুলিশ-এর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এছাড়া বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স মুজিব বাহিনী)-র প্রশিক্ষণ হাফলং এবং দেরাদুনে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীমঙ্গলের অনেক মুক্তিযোদ্ধা এসব জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মার্চের শেষে শ্রীমঙ্গল থানাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভানুগাছ সড়কে গাছ ফেলে সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন বাড়ির ছাদে পাথর ও ইটের টুকরো জমা করা হয়, যাতে শত্রুসেনাদের আক্রমণ করা যায়। মৌলভীবাজারে অবস্থানরত পাকসেনারা ২৯শে মার্চ শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াবাজারে এসে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হরমোজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। ৩০শে মার্চ আগুন নেভানোর অজুহাতে পাকবাহিনী ফায়ার বিগ্রেডের দুটি গাড়ি শ্রীমঙ্গলে পাঠায়। শ্রীমঙ্গলের তরুণরা গাড়ি আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এক সময় গাড়ি দুটি ফিরে যায়। ৩১শে মার্চ হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ শ্রীমঙ্গল আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। ১লা এপ্রিল মানিক চৌধুরী ও মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত হবিগঞ্জ থেকে প্রতিরোধ বাহিনী নিয়ে শ্রীমঙ্গলে আসেন। এদিন শ্রীমঙ্গল থেকে কর্নেল (অব.) আব্দুর রব, এম এ মুকিত লস্কর, আনিছ মিয়া, ডা. আব্দুল আলী হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য সিলেটের দিকে যাত্রা শুরু করেন। শেরপুর যাওয়ার পর পাকবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে সিলেটে পালিয়ে যায় এ-যুদ্ধে শ্রীমঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুকিত লস্কর ও আনিছ মিয়া শহীদ হন। এছাড়া আরো ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২রা এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজার পর্যটন রেস্টহাউজে অবস্থান করেন। ফলে ২৭শে মার্চ থেকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা অফিস সিলেট জেলায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এ-সময় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী, ব্রিগেডিয়ার পান্ডে, দেওয়ান ফরিদ গাজী, মুস্তাকিম আলী চৌধুরী, ইসমত চৌধুরী, জাকির খান চৌধুরী প্রমুখ নেতা ও সামরিক ব্যক্তি শ্রীমঙ্গলের জনতা ও প্রতিরোধ সৈনিকদের সঙ্গে মিলিত হন। ৩০শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শ্রীমঙ্গলে অনুপ্রবেশ করে থানায় অবস্থান নেয় এবং সারা শহরে কারফিউ জারি করে। তারা শহরের ডাকবাংলো এবং ওয়াপদা বিল্ডিং-এ ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে তারা থানার বিভিন্ন জায়গায় তাদের দোসরদের দিয়ে ক্যাম্প স্থাপন এবং পুল-কালভার্ট পাহারার জন্য ঘাঁটি স্থাপন করে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে দেওয়ান আবদুর রশিদ (প্রাক্তন চেয়ারম্যান, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা), ফিরোজ মিয়া (সিন্দুরখান), আলতু মিয়া (লইয়ারকূল), আকবর হাজী (মতিগঞ্জ), আবরু মিয়া (মতিগঞ্জ), আবদুল মিয়া (জামসী), শাইস্তা মিয়া (আলিসারকূল), জব্বার মিয়া (শ্রীমঙ্গল), আসলাম আলী (শ্রীমঙ্গল), ডা. আব্দুল কাইয়ূম (শ্রীমঙ্গল), মাহমুদ আলী (শ্রীমঙ্গল), ময়না মিয়া, হাজী আছদ্দর আলী, মনোহর আলী, এলিম উল্লাহ, ফজলে এলাহী লুলু, নামদার আলী, বশির উদ্দিন, ইদিরিস মিয়া, আব্দুল গফুর, সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল হান্নান, সৈয়দ মতিউর রহমান, আসমত উল্লাহ, সৈয়দ মঈনউদ্দিন, সালিক চৌধুরী, আবদুর নূর, ইসলা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
দেওয়ান আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রথমে শান্তি কমিটি – এবং পরে রাজাকার আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করা হয়। এসব বাহিনী হিন্দু জনগোষ্ঠীর ফেলে যাওয়া সম্পদ লুণ্ঠন, আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা- কর্মী, এলাকা থেকে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, হত্যা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিকট মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেয়া ইত্যাদি কাজ করত। এসব বাহিনী সারা উপজেলার রেল ও সড়ক পথের গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট পাহারা দিত।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা শ্রীমঙ্গলে অনেক হত্যা, গণহত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। ২৮শে এপ্রিল দুপুরের পূর্বে পাকবাহিনীর দুটি বিমান শ্রীমঙ্গলে অবিরাম বোমা বর্ষণ করে। এতে মাইজদিহি টি-ফ্যাক্টরি এবং মোদাব্বির হোসেনের রেশন দোকান ভস্মীভূত হয়। বোমায় একজন মহিলা জীবন্ত দগ্ধ হন, একজন কাঠমিস্ত্রি আহত হয় এবং গৌরাঙ্গ মল্লিক নামে এক ছাত্র নিহত হয়।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এক মাইল পূর্বে অবস্থিত ভাড়াউড়া চা- বাগানে ১লা মে পাকবাহিনী এক নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। এখানে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে ৫৪ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়। এটি ভাড়াউড়া গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। রূপসপুরে পাকবাহিনী ১লা ও ৩রা মে একই পরিবারের ৯ জনকে হত্যা করে। রূপসপুর গণহত্যা শ্রীমঙ্গলে পাকবাহিনীর আর এক নিষ্ঠুরতার নিদর্শন।
শ্রীমঙ্গল শহরের একটি আবাসিক এলাকার নাম পূর্বাশা। ১লা মে-র ভাড়াউড়া গণহত্যার পর বুড়বুড়িয়া চা-বাগানের ৮ জন যুবককে ধরে এনে রাজাকাররা পূর্বাশায় হত্যা করে লাশগুলো খালে ফেলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি পূর্বাশা গণহত্যা নামে পরিচিত।
পাকবাহিনী ১১ই মে শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন চৌধুরীর পিতা এবং মুক্তিযোদ্ধা রাজমোহন চৌধুরীর পিতাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদাররা ১২ই মে যাত্রাপাশা গ্রামের হোমিও চিকিৎসক বীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, দোকানদার প্রমোদ কান্তি রায়, স্বর্ণকার শশী বণিক ও তার এক ভাইকে হত্যা করে। এছাড়া এসব গ্রামের বহু লোককে ধরে শারীরিক নির্যাতন করে। অনেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় উত্তরসুরে (শাহজীবাজার) এক গণহত্যা চালায়। উত্তরসুর গণহত্যায় ৯ জন মানুষ প্রাণ হারান।
শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানের শ্রমিকদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। পাকবাহিনী ও রাজাকাররা চা-শ্রমিকদের অনেককে নির্যাতন ও হত্যা করে। রাজঘাট চা-বাগানের শ্রমিকনেতা পবন তাঁতী, সন্তোষ কর্মকার, ফুসকুরি চা-বাগানের শম্ভু সিংহ, শঙ্কর দেবনাথ, ফুলছড়া বাগানের আইমুলা, সিন্ধুরখানের গোবিন্দ চরণ সোম, সোনাতন ব্যানার্জী প্রমুখকে তারা হত্যা করে। এছাড়া চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
অক্টোবর মাসের শেষদিকে আথানগিরি থেকে আব্দুল মুকিতের নেতৃত্বে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল গোলা- বারুদের জন্য ভারতে যাবার পথে সাতগাঁও চৌমোহনার অদূরে রাজাকারদের মুখোমুখি হয়। এ-সময় ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। রাজাকাররা তাঁদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। বাকি ৩ জন পরে আলিশা গ্রামে ধরা পড়েন। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাত-পা বেঁধে পাকবাহিনীর কাছে সোপর্দ করে। ধৃত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন সমীর সোম, আব্দুল মুকিত, সুদর্শন, খোকা, রানু ও অজ্ঞাতপরিচয় একজন। তাঁদের পরে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করে। শ্রীমঙ্গল শহরের পাশে দেববাড়িতে পাকবাহিনী কেতকী সেন (কুটি সেন) ও নিকুঞ্জ বিহারী সেনকে হত্যা করে।
শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন গ্রাম ও চা-বাগানে অসংখ্য মানুষ পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে প্রাণ হারায়। এসব মানুষের অনেকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম-পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- আছকর মিয়া (মির্জাপুর), রাধারমণ চৌধুরী (মির্জাপুর), প্রমোদ রঞ্জন দাস (মির্জাপুর), রাজকুমার দাস (মির্জাপুর), শশী মোহন দাস (মির্জাপুর), প্রাণতোষ বণিক (মির্জাপুর), অঘোর চন্দ্র ভট্টাচার্য (বৌলাশীর), ডা. রাখাল চন্দ্র দাস (ধানিখলা), নলিনী কুমার চক্রবর্তী (মির্জাপুর), প্রেমলাল বড়ুয়া (মির্জাপুর), মনমোহন নমঃশূদ্র (বৌলাশীর), অনিল চন্দ্র রায় (মির্জাপুর), ডা. বীরেন্দ্র দেব (যাত্রাপাশা), শৈলেন্দ্র পাল (ভূনবীর),হেন্দ্র পাল (ভূনবীর), রামনরেশ কৈরী (বাদে আলীসা), জহুর আলী (বাদে আলীসা), সুন্দর আলী (রাজপাড়া), রাকেশ চন্দ্র সরকার (রুস্তমপুর), যোগেশ চন্দ্র সরকার (রুস্তমপুর), আপ্পানা অলমিক (মাকড়িছড়া), খেটটা অলমিক (মাকড়িছড়া), নারায়ণ গোয়ালা (জাগছড়া), ভরত গোয়ালা (জাগছড়া), নিরু মিস্ত্রি (দক্ষিণটুক), হাফিজ উল্লা (হুগলিয়া), ভাগরু (সিন্দুরখান), আব্দুল করিম (লাহারপুর), মশ্বব উল্লা (জানাউড়া), নকুল দাস (খলিলপুর), আবু মিয়া (সিক্কা), খোকা মিস্ত্রি (ভাগলপুর), বানেশ্বর মালাকার (কাকিয়ারবাজার), আতাউর রহমান (পশ্চিম শ্রীমঙ্গল), অর্জুন দাস (মাস্টারপাড়া), কৃষ্ণ পোদ্দার, মোস্তফা আলম, অর্জুন পোদ্দার, লাইলী বেগম, গৌরাঙ্গ মালাকার, কুশো বাউরী, নিমাই তাঁতী, গোদাম বাবু, হরমুজ উল্লাহ, রফিক আলী, আলী আকবর, আলী আসগর, শংকর দেব, গোবিন্দচরণ বোস, ছয়বল রিকিয়াসন, ছুটুয়া রিকিয়াসন, দরবারিয়া রিকিয়াসন, মহাবীর রিকিয়াসন, রঘুনন্দন রুহিদাস, মুরুলিয়া বড়াই, কানাইয়া ভর, ছিকনন্দন রুহিদাস, পবন তাঁতী, শম্ভু সিংহ, শংকর দেবনাথ, আইমুল, সোনাতন ব্যানার্জী, বাসু তাঁতী, সন্তোষ কর্মকার, হোছনী হাজরা, চিনিলাল হাজরা, গুরা হাজরা, কৃষ্ণ হাজরা, মহারাজ হাজরা, নুনুলাল হাজরা, নকুলা হাজরা, অমৃতা হাজরা, ক্ষুদিরাম হাজরা, বীরবল হাজরা, রামদেও হাজরা, হরকু হাজরা, রামছরুক হাজরা, কালাচান্দ ঘাটুয়ার, সুকনন্দন রিকিয়াসন, ইন্দ্র ভূঁইয়া, ফাগু হাজরা, রামলাল হাজরা, শিব মুড়া, চৈইত ভূঁইয়া, আগুন ভূঁইয়া, বুকই বেলী, রাজকুমার মাল, ফেরুয়া গৌড়, রামকৃষ্ণ গৌড়, রামচরণ গৌড়, জয়দেও কাহার, সঙ্গা কুর্মী, প্রমোদ কান্তি রায়, শশী বণিক, হরিয়া দেব, প্রেমলাল বড়ুয়া, শ্রীধর তাঁতী, বালিয়াটি কড়িয়া, হনুমান তাঁতী, যতীন্দ্র খয়রা, ননতুল বোনাজ প্রমুখ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাকবাহিনীর বেশ কয়েকটি নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল, যেমন- সরকারি ডাকবাংলো, ওয়াপদা অফিস এবং ভানুগাছ সড়কে অবস্থিত শ্রম কল্যাণ কেন্দ্ৰ৷
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বেশ কয়েকটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- সাধুবাবার গাছতলা বধ্যভূমি, রশিদপুর ৫ নম্বর কূপের বিপরীত স্থান, নূরজাহান চা-বাগান, সিন্দুরখান চা-বাগান (জয়বাংলা বধ্যভূমি), বৌলাছড়া চা- বাগান এবং ওয়াপদা। ৬ই ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (পিতা নুর মিয়া, হুগলিয়া)।
শ্রীমঙ্গলের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন— আব্দুল লতিফ চৌধুরী, জৈনউল্ল্যাহ (লইয়ারকুল), রহিম উল্ল্যাহ (লইয়ারকুল), কদর আলী (লইয়ারকুল), আব্দুর রহমান (লইয়ারকুল), আলী আকবর (লইয়ারকুল), আলী আজগর (লইয়ারকুল), চেরাগ আলী (মাধবপাশা), মঈনুউদ্দিন (লামুয়া), আলতাফুর রহমান (লামুয়া), আলম মিয়া (সুনগইড়), সমির সোম (কালীঘাট রোড), আবদুল মজিদ (কালীঘাট রোড) এবং রহমত আলী (পশ্চিম শ্রীমঙ্গল)।
শ্রীমঙ্গলে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দুইটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। তা হলো- সাধুবাবার বটগাছতলা বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও কলেজ রোডে ভাড়াউড়া চা-বাগান সংলগ্ন স্মৃতিসৌধ। এছাড়া রয়েছে শহীদ আনিছ সড়ক, শহীদ সমীর মিলনায়তন ও শহীদ সমীর সড়ক (জালালিয়া রোড)। [চন্দনকৃষ্ণ পাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড