You dont have javascript enabled! Please enable it! শ্মশানঘাট বধ্যভূমি(চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

শ্মশানঘাট বধ্যভূমি(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

শ্মশানঘাট বধ্যভূমি(চাঁপাইনবাবগঞ্জ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত নবাবগঞ্জ শ্মশানঘাটটিকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের পর পাকবাহিনী দালালদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষে যাঁদের ভূমিকা রয়েছে তাঁদের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে সেই তালিকা অনুযায়ী স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং তাঁদের নিরীহ আত্মীয়-স্বজনদের তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্মশানঘাট বধ্যভূমিতে তারা পার্যায়ক্রমে অনেককে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখে কিংবা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বুলেট যাতে খরচ না হয় সেজন্য জবাই করেও অনেককে হত্যা করা হতো।
১৬ই জুন পাকসেনা ও রাজাকাররা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩০-৪০ লোককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার করার পর জেলখানায় পাঠায়। রাত ১২টার দিকে হানাদাররা এসব অসহায় মানুষকে শ্মশানঘাটে নিয়ে লাইন করে দাঁড়াবার নির্দেশ দেয়। লাইনের মধ্য থেকে তারা ১২ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বাকিদের আবার জেলখানায় ফিরিয়ে নেয়। সেখানে পাকিস্তানি মেজর শেরওয়ানি এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। কোনো তথ্য না পেয়ে তারা ৭ জনকে আবার শ্মশানঘাটে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। পরের দিন কয়েকজনকে আবার শ্মশানঘাটে নিয়ে হত্যা করে। তার পরের দিনও তারা ২ জন নির্যাতিত যুবতিসহ বেশ কয়েকজনকে শ্মশানঘাটে নিয়ে হত্যা করে। তিনদিনে তারা প্রায় অর্ধশত মানুষকে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করে।
৪ঠা আগস্ট তারা ১৫ জনকে আটক করে নবাবগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। সারারাত তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। পরদিন সন্ধ্যায় মেজর শেরওয়ানির নির্দেশে ১৫ জনকে শ্মশানঘাটে গুলি করে হত্যা করে। সকল মৃতদেহ তারা মহানন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
৫ই আগস্ট ১০-১২ জনকে ধরে এনে জেলখানায় রাখে। তদের কাছে কাঙ্ক্ষিত তথ্য না পেয়ে গাড়িতে তুলে শ্মশানঘাট বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। সেখানে মেজর শেরওয়ানি ও লতিফ মিনিস্টারের নির্দেশে মেজর ইউনুস, সুবেদার ফিরোজ আহম্মেদ ও নায়েক মদোদ খান তাদের গুলি করে হত্যা করে। এসব মৃতদেহও তারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এদের মধ্যে আবদুর রহমান মন্টু গুলিবিদ্ধ হলেও সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়নি। ভাসতে ভাসতে তিনি মহানন্দার অপর পাড়ে গিয়ে পৌঁছান। তাঁকে বারঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রামের একজন তুলে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
শহরের বহু তরুণ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থককে এ শ্মশানঘাটে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বুলেট যাতে খরচ না হয় সেজন্য জবাই করেও অনেককে হত্যা করা হয়। হত্যার পর কোনো-কোনো মৃতদেহ তারা গর্ত করে পুঁতে ফেলত। তবে অধিকাংশ মৃতদেহ তারা ভাসিয়ে দিত মহানন্দা নদীতে। [মাযহারুল ইসলাম তরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড