You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.25 | শেলাবুনিয়া গণহত্যা (মংলা, বাগেরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

শেলাবুনিয়া গণহত্যা (মংলা, বাগেরহাট)

শেলাবুনিয়া গণহত্যা (মংলা, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ২৫শে এপ্রিল। এতে ৬ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয় বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া গ্রামের পোদ্দারবাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির লোকজনদের দ্বারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সারাদেশে যে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়, তারই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাটেও গণহত্যা চলে। এ ব্যাপারে মংলা বন্দরের শান্তি কমিটির লোকজন তৎপর হয়ে ওঠে। ২৪শে এপ্রিল বাগেরহাট সদরের গণহত্যার পর পাকসেনাদের কাছ থেকে পুরস্কারের লোভে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হয়। মংলা বন্দর শান্তি কমিটির সভাপতি ডা. অলিউল্লাহ ও সম্পাদক আবছার উদ্দীন একাজ করার জন্য কিছু লোককে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। ২৫শে এপ্রিল সারাদিন ধরে তারা মিটিং করে। তাদের ধারণা, তারা যদি নিজেদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ জনগণকে হত্যা করে এবং এ খবর খুলনায় পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছায়, তাহলে তারা পুরস্কৃত হবে। তাই এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে নাছিম খান। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় ছিল। ডা. অলিউল্লাহ ও আবছার উদ্দীনের যোগ- সাজসে সিদ্ধান্ত হয় নাছিম খানের নেতৃত্বে প্রথম অপারেশন হবে শেলাবুনিয়ার পোদ্দারবাড়িতে। সে অনুযায়ী তারা মংলা বন্দরে বসবাসরত বেশকিছু বিহারি শ্রমিককে সংগঠিত করে। খুলনায় ঐসব বিহারি শ্রমিকদের কিছু আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন হামলায় নিহত হয় বলে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল। মংলার শান্তি কমিটির লোকেরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের অতি সহজে দলে টানতে সক্ষম হয়। নাছিম খান আহ্বান করার পর তারা তার সঙ্গে যোগ দেয় এবং তার নির্দেশমতো শেলাবুনিয়া পোদ্দারবাড়ি আক্রমণ করে।
২৫শে এপ্রিল সন্ধ্যার পর নাছিম খান শতাধিক সশস্ত্র লোক নিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। প্রতিশোধপরায়ণ এসব বিহারি শ্রমিক বাড়ির মধ্যে ঢুকে বর্বর আক্রমণ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা এ বাড়ির যমুনা পোদ্দার, জিতেন্দ্রনাথ পোদ্দার, বিশ্বনাথ পোদ্দার, নারায়ণচন্দ্র পোদ্দার, দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং মানিকলাল পোদ্দারকে জবাই করে হত্যা করে। বাড়ির মধ্য থেকে তাদের ধরে নিয়ে নারকেল গাছ তলায় একজন, রান্নাঘরের পাশের ছোট পুকুরঘাটে দুজন এবং ঘরের মধ্যে তিনজনকে জবাই করে হত্যা করে। ঘটনার দিন নীরোদ বিহারী পোদ্দার (সাবেক প্রধান শিক্ষক, মংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) এবং কালী দাসী পোদ্দার বাড়িতে না থাকায় বেঁচে যান। হত্যকাণ্ডের পর বিহারিরা বাড়ির যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। [মনোজ কান্তি বিশ্বাস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড