মুক্তিযুদ্ধে শৈলকুপা উপজেলা (ঝিনাইদহ)
শৈলকুপা উপজেলা (ঝিনাইদহ) মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে বিভিন্ন জাতীয় অন্দোলনে এ উপজেলার ছাত্র-জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান – ও ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর – অসহযোগ আন্দোলন- শুরু হলে ঝিনাইদহ মহকুমায় এ কে এম আব্দুল আজিজকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদে শৈলকুপা থেকে ডা. কাজী খাদেমুল ইসলাম, লুৎফর রহমান (সিদ্দি), গোলাম রব্বানী, ডা. হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস, ডা. আব্দুল জলিল মিয়া, ডা. সিরাজুল ইসলাম, সুধাংশু শেখর সাহা, মোবারক আলী মন্টু, খন্দকার রোকনুজ্জামান রবার্ট, মীর মোবারক হোসেন মন্টু প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এঁরা শৈলকুপা থানায়ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ-সময় রহমত আলী মন্টুকে প্রধান করে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। ১৭ই মার্চ উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ছাত্রনেতা মনোয়ার হোসেন মালিথার নেতৃত্বে শৈলকুপায় স্বাধীন বংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ-সময় ছাত্রনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শামসুর রহমান (বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত), আজিজার রহমান, বিজন সাহা, গোপেন বিশ্বাস, আমিনুর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, সুজিত কুমার সাহা, তবিবর রহমান, গোলাম মোস্তফা (স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সংসদ সদস্য), গোলাম কুদ্দুস, জেড এ ওয়াহেদ, আব্দুল হাই (বর্তমানে আওয়ামী লীগ-এর সংসদ সদস্য) প্রমুখ।
ঢাকায় পাকবাহিনীর ২৫শে মার্চের গণহত্যার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঝিনাইদহ সদর থানায় ছুটে যান। সেখানে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ও কোর্ট দারোগা কাঞ্চন ঘোষালের নেতৃত্বে ঝিনাইদহ সদর থানা ও ট্রেজারি খুলে পুলিশ ও আনসারসহ উপস্থিত জনতার মধ্যে ৪০০ রাইফেল বিলি করা হয়। এর পাশাপাশি মহকুমার ৫টি থানায়ও একই নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী শৈলকুপা থানায় রক্ষিত অস্ত্রগুলো পুলিশ, আনসার ও জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। আনসার ও ইপিআর বাহিনী থেকে অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা সদস্যরা ছাত্র-জনতাকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বনগাঁ, বেতাই, কল্যাণী, চাকুলিয়া ও দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
শৈলকুপা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের থানা সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রোকনুজ্জামান রবার্ট এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান নৌবাহিনী প্রত্যাগত রহমত আলী মন্টু। এছাড়া আরো যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁরা হলেন- অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (শিক্ষক নেতা ও স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সংসদ সদস্য), মনোয়ার হোসেন মালিথা (দেবতলা), ডা. কাজী খাদেমুল ইমলাম, মীর মোবারক হোসেন মন্টু, ডা. হেলালউদ্দিন বিশ্বাস (হেতামপুর) ডা. সিরাজুল ইসলাম ( হেতামপুর), শামসুজ্জামান খান পান্না (দেবতলা), লুৎফর রহমান (সিদ্দি), কাজী নাসিরুল ইসলাম সাচ্চা, কমল কৃষ্ণ সাহা (কবিরপুর), বিমল কুমার সাহা (কবিরপুর), জালাল উদ্দিন খান (দেবতলা), ওয়াদুদ মুন্সী (হাটফাজিলপুর), আবু আহমেদ সোনা মোল্লা (কুমিরাদহ), আবুল হোসেন জোয়ার্দার (বিপ্রবগদিয়া), মোশারফ হোসেন সোনা (নলখোলা), কুবাদ জোয়ার্দার (মির্জাপুর), আজাহার বিশ্বাস (চরবাখরবা), দবির উদ্দিন জোয়ার্দার (শেখপাড়া, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সংসদ সদস্য), শামসুর রহমান (জালশুকা), আব্দুল করিম বিশ্বাস (বালিয়ডাঙ্গা), মকবুল হোসেন (মাইলমারী, বর্তমান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার), আজিজার রহমান, লুৎফর রহমান (সিদ্দি), আব্দুল করিম বিশ্বাস, কাজী আব্দুল মতলেব, আব্দুস সোবহান জায়ার্দার, আতিয়ার রহমান, খোরশেদ মোল্লা প্রমুখ। ২৫শে মার্চ ঢাকার হত্যাযজ্ঞ সারাদেশের সঙ্গে ঝিনাইদহবাসীকেও হতবাক করে দেয়। সর্বত্র শুরু হয় প্রতিরোধের প্রস্তুতি। ডামি রাইফেলসহ ছাত্র-জনতা, আনসার ও ইপিআর বাহিনী থেকে পালিয়ে আসা সদস্যদের নিয়ে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এডভোকেট আমীর হোসেন মালিথাকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। ছযটি থানায়ও ৬টি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। ঝিনাইদহ জেলাসহ ৬টি থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খোলা হয় ইনফরমেশন সেন্টার, যার গোপন কোড ও প্রতীক নাম ছিল ‘অলিভার’। এ-সময় শৈলকুপা সেন্টারের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের তদানীন্তন থানা সাংগঠিনক সম্পাদক খন্দকার রোকনুজ্জামান রবার্ট এবং গাড়াগঞ্জ সেন্টারের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক সচিব কাজী নাসিরুল ইসলাম সাচ্চা। শৈলকুপা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান ছিলেন নৌবাহিনী প্রত্যাগত রহমত আলী মন্টু।
৫ই এপ্রিল কুষ্টিয়া থেকে পালিয়ে যশোর সেনানিবাসে যাওয়ার পথে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ ব্রিজে অর্ধশতাধিক পাকসেনার একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এতে ন্যূনপক্ষে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং তিনজন গ্রামবাসী শহীদ হন। অবশিষ্ট পাকসেনারা পশ্চাদপসরণ করে এবং তাদের পরিত্যক্ত ৭টি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। গাড়াগঞ্জ ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধই শৈলকুপা উপজেলায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ।
পাকবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট এবং কুষ্টিয়া ও মাগুরার ক্যাম্প থেকে এসে শৈলকুপা উপজেলায় বারবার অভিযান চালায়, কিন্তু স্থায়ীভাবে কোনো ক্যাম্প স্থাপন করেনি। তবে উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টার্স ও শৈলকুপা থানায় রাজাকার বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প ছিল। পাকবাহিনী এখানে এসে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাত।
শৈলকুপা উপজেলায় হাকিমপুরের তোবারেক মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী এবং খন্দকবাড়িয়ার সিরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আলবদর- বহিনী স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। জামায়াতে ইসলামী – ও মুসলিম লীগ-এর উদ্যোগে গঠিত শান্তি কমিটি ও এতে অংশগ্রহণ করে। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী আরো কয়েকজন হলো মজুমদার পাড়ার হেদায়েত মোল্লা, চতুড়ার নওশের, বিজুলিয়ার কবির আহমেদ মজনু, জালশুকার হবিবর জোয়ার্দার, কুশবাড়িয়ার মোজাহার মোল্লা, দেবতলার আলি আলম খান, আবাইপুরের সাদুল্লা বিশ্বাস, শ্যামপুরের মহী মোল্লা, আগুনীয়া পাড়ার আফতাব উদ্দিন, সাতগাছির গনী বিশ্বাস, আহমেদ প্রফেসর প্রমুখ।
যুদ্ধের শুরুতেই শৈলকুপাতে রাজাকর ও আলবদর বাহিনীর অত্যাচার শুরু হয়। এপ্রিলের শুরুতে বারইপাড়া গ্রামের দুজন ও দেবতলা গ্রামের দুজনকে ধরে নিয়ে শৈলকুপা ব্রিজের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে। শৈলকুপার প্রসিদ্ধ ডা. মনোরঞ্জনকে গুলি করে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয়। বড়দাহ ব্রিজ ভাঙ্গার অপরাধ দেখিয়ে গাড়াখোলা গ্রামের মজিবর ও তসলিমকে হত্যা করা হয়। শামপুর গ্রামের আদালতকে শৈলকুপা বাজার থেকে ধরে নদীর ধারে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কুমারখালীর আজইলবর্শী গ্রামে জি কে খালের পাড়ে শুইয়ে শৈলকুপার ইকবাল, গোপাল, কুদ্দুস ও শাহজাহানকে হত্যা করা হয়। আহত অবস্থায় জহুরুল ইসলাম পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে কবিরপুর, ঝাউদিয়া, ষষ্ঠিবর, ধলহরা, ধাওড়া, যুগিপাড়া, রাইনগর, বিজলিয়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামে লুটতরাজ এবং মহিলাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েড়ার রিজিয়া বেগম বীরাঙ্গনা হিসেবে এখনো জীবিত আছেন। এছাড়া উল্লিখিত গ্রামগুলোর প্রায় ৫০০ বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। ২৬শে নভেম্বর কামান্না ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা কামান্না ট্র্যাজেডি- নামে পরিচিত।
পাকবাহিনী শৈলকুপা থানা ভবনের একটি কক্ষকে নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া থানা পরিষদের আবাসিক ভবনগুলো দখল করে বন্দিশিবির গড়ে তোলে। এখানে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ লোকদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো।
শৈলকুপা উপজেলায় দুটি গণকবর আছে – মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় গণকবর ও কামান্না গণকবর। প্রথমটিতে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাসহ সহস্রাধিক মানুষকে কবর দেয়া হয়। আর কামান্নাতে আছে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার কবর। এছাড়া আবাইপুরে ৫ জনের একটি গণকবর আছে। শৈলকুপায় দুটি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে- এফএফ বাহিনী ও মুজিব বাহিনী (বিএলএফ)। এ-দুটি বাহিনীর সদস্যরা ভারতের যথাক্রমে বিহার ও দেরাদুনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের কমান্ডে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
শৈলকুপাতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে গাড়াগঞ্জ ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ, আলফাপুর যুদ্ধ, আবাইপুর যুদ্ধ, কামান্না যুদ্ধ ও শৈলকুপা থানা যুদ্ধ – উল্লেখযোগ্য। ৫ই এপ্রিল গাড়াগঞ্জ ব্রিজযুদ্ধে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। আলফাপুর যুদ্ধ সংঘটিত হয় দুবার। প্রথমবার ৪ঠা আগস্টের যুদ্ধে ১৫-২০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং ৭৫টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। দ্বিতীয়বার ৩০শে আগস্টের যুদ্ধে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন রহমত আলী মন্টু, দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। ১৪ই অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট নিহত হয় এবং ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদেরকে আবাইপুর গণকবর এ সমাহিত করা হয়। ২৬শে নভেম্বর কামান্না যুদ্ধে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শৈলকুপা থানা যুদ্ধ সংঘটিত হয় পাঁচ দফায় – ৮ই এপ্রিল, ১৫ই এপ্রিল, ৬ই আগস্ট, ১৭ই সেপ্টেম্বর এবং ৮ই ডিসেম্বর। ৮ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করে নেন এবং ১৫ই এপ্রিল পাকসেনারা তা পুনর্দখল করে। এরপর ৬ই আগস্ট ও ১৭ই সেপ্টেম্বর দুবার চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখলে ব্যর্থ হন। ৮ই ডিসেম্বরের যুদ্ধে হানাদাররা পরাজিত হয় এবং শৈলকুপা থানা হানাদারমুক্ত হয়।
শৈলকুপা উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মাছেদ আলী (পিতা আছানত মণ্ডল, বরিয়া), শহীদুল ইসলাম (পিতা আজমত আলী, শহীদনগর), আব্দুল জলিল (পিতা টেংগর – শেখ, সারুটিয়া), শাহজাহান (পিতা জব্বার মণ্ডল, গোয়ালবাড়িয়া), আব্দুল কুদ্দুস (পিতা আবুল বিশ্বাস, নাদপাড়া), লুৎফর রহমান (পিতা নুরুদ্দিন সরদার, নাদপাড়া), ইকবাল হোসেন (পিতা মতিয়ার রহমান, দেবতলা), আদালত মণ্ডল (পিতা মহর আলী, শ্যামপুর), লুৎফর রহমান (পিতা আরিফুল্লা মণ্ডল, ধলহরা), আব্দুল আলীম (পিতা আব্দুল হালিম, দামুকদিয়া), মহম্মদ আলী (পিতা ওবাইদুল মোল্লা, বসন্তপুর), রওশন আলী (পিতা সোবহান মিয়া, কুশবাড়িয়া), আনোয়ার হোসেন (পিতা রমজান আলী, জাঙ্গানিয়া), দুধ মল্লিক (পিতা বশিরউদ্দিন শেখ, চরমালিথিয়া), শাহাদুন ইসলাম (পিতা মানিক মণ্ডল, শেখপাড়া), আবু জাফর (পিতা ইয়াজউদ্দিন, সিদ্দি), বাবুর আলী (পিতা আশরাফ আলী, কাজীপাড়া), ইসমাইল হোসেন (পিতা ছানারুদ্দিন শেখ, গোয়ালবাড়িয়া), আবুল হোসেন (পিতা কেতাবউদ্দিন সরদার, বন্দেখালী), আবুল কাশেম (পিতা মোজাহার শেখ, বরিয়া), আলিম উদ্দিন (পিতা জয়নাল খাঁ, দোহারো), ইউসুফ আলী (পিতা ইন্তাজ আলী, সুবিদ্দাহ), চেতন আলী (পিতা হাতেম আলী, জালশুখা), আবু সুফিয়ান (পিতা আলাউদ্দিন, ধাওড়া), উকিল উদ্দিন (পিতা আজম আলী, বরিয়া), শাহাদত হোসেন (পিতা নাদের শেখ, জালশুখা), ইসমাইল হোসেন (পিতা ছানার উদ্দিন, দহকোলা), দিদার হোসেন (পিতা ওসমান আলী শেখ, বন্দেখালী), আনসার (দেবতলা), গোপাল (নিয়ামতবাড়িয়া), রুস্তম আলী (বড়দা), কাশেম আলী (ধলহরা), আজিবর রহমান (পাইকপাড়া) এবং সিরাজুল ইসলাম (মনোহরপুর)।
স্বাধীনতা লাভের পরপরই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কামান্নায় প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ স্মৃতি সংঘ এবং শৈলকুপায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। পরবর্তীকালে শৈলকুপায় নির্মিত হয় ৭১- এর বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সমাধি, মীন গ্রামে শহীদ স্মৃতিসৌধ, আবাইপুর গণসমাধি ও কামান্না শহীদ স্মৃতিসৌধ। এছাড়া একটি গ্রামের নাম শহীদনগর ও একটি বিদ্যালয়ের নাম শহীদ আজিবর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাখা হয়। মীন গ্রাম ‘শহীদ স্মৃতিসৌধ’-এ লেখা রয়েছে— ‘৩০ লাখ শহীদের আকুতি শুনিতে কি পাও, সোনার বাংলা গড়তে শপথ নিয়ে যাও’। [মো. আব্দুল ওহাব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড