শৈলকুপা থানা যুদ্ধ (ঝিনাইদহ)
শৈলকুপা থানা যুদ্ধ (ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় একাধিকবার। ৫ই এপ্রিল গাড়াগঞ্জ বিজযুদ্ধ – (বা বড়দা ব্রিজযুদ্ধ)-এ সফলতার পর মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার থানা আক্রমণ করেন। ৮ই এপ্রিল ১২ ঘণ্টা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম থানা দখল করেন। কিন্তু ১৫ই এপ্রিল তা আবার পাকসেনাদের দখলে চলে যায়। এরপর ৬ই আগস্ট ও ১৭ই সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন ওহাবের নেতৃত্ব দুবার আক্রমণ চালিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করতে ব্যর্থ হন। এতে অবশ্য পাকসেনাদের এদেশীয় দুজন দোসর হাকিমপুরের তবারেক মোল্যা ও তার ছেলে পান্না নিহত হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা এক্সপ্লোসিভ দিয়ে কুমার নদের ওপর শৈলকুপা ব্রিজের একাংশ উড়িয়ে দেন। দিনরাত পাহারারত পাকসেনাদের দ্বারা বেষ্টিত এ ব্রিজটি ধ্বংসে কাজী আশরাফুল আলম, দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার, নজরুল ইসলাম, তবিবর রহমান, নাজিমউদ্দিন, আব্দুস সামাদ, তোফাজ্জেল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল বারিক, তৈয়বুর রহমান, সাজেদুর রহমান, রাশিদুল হাসান বাবলু, মাহবুবুল হাসান, আব্দুস সাত্তার, নওশের আলী, আলাউদ্দিন, এয়ারম্যান মজিবর রহমান এবং গোলাম মোস্তফাসহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন।
৬ই ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরের পতনের পর কতিপয় পাকসেনা এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস পালিয়ে শৈলকুপা থানায় এসে আশ্রয় নেয়। তারা আত্মরক্ষার্থে এখানকার সিও অফিসের বাসা-বাড়ির ছাদে বাংকার নির্মাণ করে। ৭ই ডিসেম্বর সকাল থেকেই থানার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দলে-দলে শৈলকুপা থানা সদরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। সারাদিন ধরে চলে থানা আক্রমণের প্রস্তুতি। এরপর আট শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা চারটি দলে ভাগ হয়ে থানার চারদিকে অবস্থান নেন। দক্ষিণে কুমার নদের পাড়ে কবিরপুরে আবু আহমেদ (সোনা মোল্যা) ও গোলাম মোস্তফার দল অবস্থান নেয়। পূর্বদিকে খালকুলার দিকে অবস্থান নেয় রহমত আলী মন্টু ও মনোয়ার হোসেন মালিথার দল। উত্তর দিকে সাতগাছি অঞ্চলে অবস্থান নেয় কমান্ডার বিশারত আলী ও জোহার দল এবং পশ্চিম দিকে বালিয়াডাঙ্গা অঞ্চলে অবস্থান নেয় দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার ও কাজী আশরাফুল আলমের দল। এদিন সন্ধ্যার পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে একযোগে থানা আক্রমণ করেন। রাত বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে বাড়তে থাকে যুদ্ধের তীব্রতাও। অবশেষে একটানা ২৭ ঘণ্টা যুদ্ধের পর ৮ই ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের পতন ঘটে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে থানায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ক্যাপ্টেন জুবেরী রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। এদিকে ১৫ জন পাকসেনাসহ অর্ধশতাধিক রাজাকার, আলবদর ও আলশামস মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয় এবং পরদিন তাদের মিত্রবাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। থানার দারোগা এবং রাজাকার কমান্ডার নওশের ও আসালতকে খালকুলা ওয়াপদায় আটকিয়ে কাঠের ফালি দিয়ে খুঁচিয়ে- খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে শৈলকুপা থানা হানাদারমুক্ত হয়। [মো. আব্দুল ওহাব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড