You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে প্রভাবশালী যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি

শেখ ফজলুল হক মনি (১৯৩৯-১৯৭৫) প্রভাবশালী যুবনেতা, স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনী-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৩৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম শেখ নুরুল হক এবং মাতা শেখ আছিয়া খাতুন। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৬০ সালে বরিশাল বি এম কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬২ সালে সেখান থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ এবং পরবর্তীতে আইন ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাগ্নে।
ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মনি রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৬০-১৯৬২ ছাত্রলীগ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আইয়ুব শাসনের সমগ্র সময় জুড়ে তিনি সকল আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত শরীফ কমিশন রিপোর্ট ও ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে ছাত্র-আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেফতার বরণ করেন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুবের অনুগত পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের সঙ্গে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এজন্য তাঁর এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়া হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তিসনদ খ্যাত ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে শেখ ফজলুল হক মনি এর পক্ষে জনমত গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উল্লেখ্য, ৬-দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩ মাস তা প্রচারের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর কারাগারে বন্দি অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়। বস্তুত ষাটের দশকের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্য নিয়ে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। একই সময় থেকে তাঁর নির্দেশে ছাত্রলীগের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে একটি নিউক্লিয়াস গড়ে ওঠে। শেখ ফজলুল হক মনি এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ৬-দফা প্রচার কালে ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। তাঁর উদ্যোগ ও নেতৃত্বে ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আর একটি বাহিনী, বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) গঠিত হয়, যা মুজিব বাহিনী নামে সুপরিচিত ছিল। বিএলএফএর চার কর্ণধারের মধ্যে তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। তিনি ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম সমন্বয়ে গঠিত বিএলএফএর পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম হানাদার মুক্ত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর মুক্তিযোদ্ধা ও যুব সমাজকে সংগঠিত করে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বাংলার বাণী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল ঘাতক-খুনি সেনা সদস্যের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পাশাপাশি একই রাতে শেখ ফজলুল মনি তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ নিমর্ম হত্যার শিকার হন। স্বজনদের কর্তৃক বনানী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি-কে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!