You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক শেখ সোলায়মান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক শেখ সোলায়মান

শেখ সোলায়মান, বীর প্রতীক (১৯৪০-১৯৮৬) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজৈর থানা শহর থকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে এ গ্রাম। শেখ সোলায়মানের পিতার নাম শেখ সবদু এবং মাতার নাম মাজু বিবি। তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।
শেখ সোলায়মান ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি ইপিআর-এর হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন।
তখন তিনি নায়েব সুবেদার পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে চট্টগ্রামে মেজর রফিকুল ইসলাম, বীর বিক্রমএর নেতৃত্বে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। চট্টগ্রামে তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন এবং অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এরপর তাঁরা মেজর রফিকের নেতৃত্বে ভারত সীমান্তবর্তী রামগড়ে যান এবং সেখান থেকে অন্য ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে তিনি ভারতে যান। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে শেখ সোলায়মান প্রথমে মেজর রফিকের অধীনে ১ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন এবং পরে মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম এর অধীনে জেড ফোর্সের সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেন। তিনি নিজে একটি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। একজন নির্ভীক যোদ্ধা ও যুদ্ধের দক্ষ কৌশলী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। শেখ সোলায়মান কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হন। কিন্তু চরম সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণ করে তিনি জীবন রক্ষা করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শেখ সোলায়মানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৩৩, খেতাবের সনদ নম্বর ১৮৩)।
স্বাধীনতার পর শেখ সোলায়মান বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যোগদান করেন। তিনি একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রাম, হিলিসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। শেখ সোলায়মান সব ধরনের প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পরিবর্তিত অবস্থায় তিনি চাকরি জীবনে অনেক নিগ্রহ ও বিড়ম্বনার শিকার হন। তাঁকে ১৯৭৬ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে তাঁকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার মেডেল (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।
শেখ সোলায়মান ১ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম (মৃত্যু ১৯৯৯)। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে রাজৈর থানার খালিয়া ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড