শেখেরহাট গানবোট আক্রমণ (ঝালকাঠি)
শেখেরহাট গানবোট আক্রমণ (ঝালকাঠি) নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পরিচালিত হয়। এ-যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
৫ই জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাউখালী উপজেলায় অনুপ্রবেশ করলে টেলিফোন অপারেটর পদে চাকরিরত হাবিবুরর রহমান টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অকেজো করে কিছু যন্ত্রপাতি ও একটি রিসিভার নিয়ে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পরবর্তীতে তিনি কমান্ডার আব্দুল হাই পনা (কাউখালী)- এর দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৩ মাইল দূরে শেহাঙ্গল গ্রামে অবস্থান নেন। শেহাঙ্গল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে জুলুরহাট। জুলুরহাটের পাশ দিয়ে গাবখান নদী বয়ে গেছে। হাবিবুর রহমান প্রায়ই টেলিফোনের লাইনে রিসিভার লাগিয়ে আড়ি পেতে হানাদারদের কথাবার্তা শুনতেন। একদিন তিনি হঠাৎ শুনতে পান হনাদাররা গানবোটযোগে হুলারহাট থেকে বরিশাল যাবে। এ সংবাদ তিনি কমান্ডার আবদুল হাই পনাকে জানান। খবর শুনে আবদুল হাই পনার দল জুলুরহাটে পাকিস্তানি সৈন্যদের গানবোটের ওপর এম্বুশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তখন নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যতিব্যস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে নিজেদের গুটিয়ে বরিশালে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। এরই অংশ হিসেবে তারা কাউখালী ও হুলারহাট থেকে ক্যাম্প ক্লোজ করে নদীপথে গানবোটের সাহায্যে বরিশালের দিকে রওনা হয়। জুলুরহাট ও শেখেরহাটের কিছু অংশ জুড়ে নদীর পাড়ে আবদুল হাই পনার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নেন। তাঁরা এসএলআর-এর সামনে এনারগা ফিট করে অপেক্ষা করতে থাকেন। হানাদার বাহিনীর গানবোট রেঞ্জের মধ্যে আসতেই প্রথম আবদুল হাই পনা এনারগা ফায়ার করেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও আক্রমণ করেন। হানাদাররাও গানবোট থেকে ফায়ার শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে নদীর বুকে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে হানাদার বাহিনী গানবোট নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের অনেক লাশ নদীর পানিতে ভাসতে থাকে। যুদ্ধে গৌরনদীর একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড