You dont have javascript enabled! Please enable it!

শেরপুর যুদ্ধ (মিরপুর, কুষ্টিয়া)

শেরপুর যুদ্ধ (মিরপুর, কুষ্টিয়া) ২৬শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ যুদ্ধে ৭০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, বীর প্রতীক শহীদ এবং কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এছাড়া হানাদাররা মফিজউদ্দীন, আমীর আলীসহ ৮ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।
২৫শে নভেম্বর রাতে কমান্ডার আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শেরপুরে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে তারা ভেড়ামারা পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শেরপুর এলাকায় প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উপস্থিতির কথা জানতে পেরে কৌশলে তিন দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে সাগরখালী নদীর তীরে অবস্থান নেন। রাত ৩টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। ২৬শে নভেম্বর ভোর ৫টায় মঙ্গলপুর মাঠে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে যুদ্ধ শুরু হয়। বেলা ১২টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এর প্রতিশোধ নিতে ঐদিন বিকেল ৩টার দিকে আমলা ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার কমান্ডার কোকোর নেতৃত্বে রাজাকারদের একটি গ্রুপ শেরপুর এলাকায় ঢুকে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও অনেক গৃহপালিত পশুকে গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করলে পাকবাহিনী পিছু হটতে থাকে এবং বিকেল ৪টায় আত্মসমর্পণ করে।
এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৭০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, বীর প্রতীক, মফিজ উদ্দিন, আমীর আলীসহ ৬ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে চকঘোগা পূর্বপাড়া দাউদ হোসেনের বাড়ির সামনে হত্যা করে। এছাড়া ২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিও পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। এছাড়া আলমগীর মিয়া হীরা, আজিজুল হক বিশ্বাস (শেরপুর), আব্দুর রহিম (লালনগর) গুরুতর আহত হন। এ-যুদ্ধে কমান্ডার আফতাবউদ্দিন খানের গ্রুপ, হাবিবুর রহমান হাবিবের গ্রুপ, ইদ্রিস আলী মোল্লা ও আব্দুল জলিলের গ্রুপ বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে। শেরপুর যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার কাছে আজো স্মরণীয় হয়ে আছে। এ-যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [মোসা. নাজমা আক্তার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!