You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিশু গ্রাম পাকক্যাম্প অপারশেন (পত্নীতলা, নওগাঁ)

শিশু গ্রাম পাকক্যাম্প অপারশেন (পত্নীতলা, নওগাঁ) পরিচালিত হয় নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল পাকহানাদারদের এ ক্যাম্পে আক্রমণ করে এবং প্রচণ্ড যুদ্ধ শেষে তা দখল করে নেয়৷ অনেক পাকহানাদার ও তাদের দোসর নিহত হয়। পাকহানাদাররা শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা আক্রমণ চালালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বাকিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান।
নভেম্বর মাসে ভারতের কালিয়াগঞ্জ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ৪০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা পত্নীতলার গগনপুরে রাস্তায় মাইন বসিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর যানবাহন ধ্বংস করেন।
ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে পত্নীতলা থানার শিশু গ্রামের এক দিঘির পাড়ে পাকহানাদার বাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্পে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। ক্যাম্পে আক্রমণের জন্য সুকুমার চন্দ্ৰ, সন্তোষ কুমার, সুবিমল চন্দ্র, অখিল চন্দ্র, নিমাই চন্দ্ৰ, গোলাম রাব্বানী, কালী চরণ দাস, সন্তোষ কুমার, চিত্ত রঞ্জন দাস, মঞ্জুর এলাহী, আফাজ উদ্দীন, আব্দুর রউফ, সবেদুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, আব্দুল খালেক, আবুল কাশেমসহ ৩০- ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর নেতৃত্বে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের এক সন্ধ্যা রাতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে শিশু গ্রামে অবস্থান নেন। তখন ছিল রমজান মাস। গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চতুর্দিক থেকে ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড ও হাতবোমা নিক্ষেপ করেন। ভোর অবধি যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি হানাদাররাও পাল্টা-আক্রমণ করে। এক সময় পাকসেনারা পরাস্ত হয়। ক্যাম্পে অবস্থানকারী পাকহানাদার, রাজাকার ও আলবদরদের প্রাণহানির মাধ্যমে শিশু গ্রামের পাকক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
এ ক্যাম্প হারানোর খবর পেয়ে অন্যান্য এলাকা থেকে পাকহানাদাররা এসে সংঘবদ্ধ হয়ে শিশু গ্রামের চতুর্দিক ঘিরে ফেলে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা-আক্রমণ শুরু করে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। পাকবাহিনীর এ আক্রমণে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এক সময় মুক্তিযোদ্ধারা চৌঘাট (ডাঙ্গির হাট) পার হয়ে ভাত গ্রামে মহির মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছদ্মবেশী রাজাকার ও আলবদররা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার নামে কালক্ষেপণ করে তাঁদের পাকবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। দিনের আলোতে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে পাকবাহিনীকে এড়িয়ে দ্রুত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। [বুলবুল চৌধুরী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!