শীলমান্দি গণহত্যা (নরসিংদী সদর)
শীলমান্দি গণহত্যা (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে। এতে ২১ জন সাধারণ লোক শহীদ হন।
নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা ব্রিজে পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। এর পূর্ব-উত্তর দিকে শীলমান্দি গ্রামটি অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা গ্রামটি উত্তর শীলমান্দি ও দক্ষিণ শীলমান্দি এই দুভাগে বিভক্ত গ্রামটির পূর্বদিকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি বিরাট বিল, যা শীলমান্দির বিল নামে পরিচিত। এ বিলের পূর্বদিকে বাগহাটা ও শাহে প্রতাপের পূর্বদিক দিয়ে ঢাকা-নরসিংদী সড়কটি চলে গেছে। এ সড়কের ওপর অবস্থিত বাগহাটা মসজিদের উত্তর পাশে একটি কালভার্ট ছিল। আরেকটি কালভার্ট ছিল পুরিন্দা বাজারের কাছে ছনপাড়ায়। এ কালভার্টদুটির কারণে পাঁচদোনা ব্রিজের প্রথম যুদ্ধে (১০ই এপ্রিল) মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতা লাভ করা সম্ভব হয়নি। কারণ পাঁচদোনা ব্রিজে যুদ্ধ শুরু হলে নরসিংদী ও পুরিন্দা ক্যাম্প থেকে সহজেই পাকবাহিনী এসে এখানকার হানাদারদের সহায়তা করত। তাই ন্যাভাল সিরাজ- ও কমান্ডার ইমাম উদ্দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ই আগস্ট সংঘটিত পাঁচদোনা দ্বিতীয় যুদ্ধের পর কালভার্টদুটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে এই কালভার্টদুটি ভাঙ্গার দুদিন পর হানাদার বাহিনী প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নরসিংদী ক্যাম্প থেকে এসে এস এস ভূঁইয়ার বাড়ির উত্তর পাশের কাঁচা রাস্তা দিয়ে শীলমান্দির দিকে অগ্রসর হয় এবং পেত্নীর হাটের ওপর দিয়ে শীলমান্দির বিল পার হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় তারা রাস্তার দুপাশের বাড়িঘরে ঢুকে যাকে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে। এভাবে হত্যাকাণ্ড চালাতে-চালাতে তারা শীলমান্দি গ্রামের পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়ে এসে পাঁচদোনা ব্রিজে অবস্থিত হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়।
শীলমান্দি গণহত্যায় শহীদরা হলেন- মালু, দুধ মেহের, খুইশা চন্দ্র দাস, রাহিমা, হোসেন আলী, জনব আলী (পিতা মানব উদ্দিন), কমর উদ্দিন (পিতা ছফর উদ্দিন), মনর উদ্দিন (পিতা মনিরউদ্দিন), সুরেশ চন্দ্র সেন (পিতা অমৃত লাল সেন), আ. গফুর, রমিজদ্দিন, দুখাই, ছাদত আলী (পিতা মাছনী প্রধান), মানিক মিয়া (পিতা মনু মিয়া), মোক্তার হোসেন, সাইজউদ্দিন, হানিফ, সয়ফুলা, কমর উদ্দিন (দক্ষিণ শীলমান্দি), মো. আলী (পিতা মিন্নত আলী, উত্তর শীলমান্দি), আহম্মদ আলী (পিতা ছোয়াদ আলী, উত্তর শীলমান্দি)। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড