You dont have javascript enabled! Please enable it!

শুচিয়া গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

শুচিয়া গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় দুবার – ১৭ই মে ও নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমবার ৬ জন এবং দ্বিতীয়বার ৮ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়।
১৭ই মে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা আরাকান সড়ক হয়ে বরকল সড়ক (বর্তমান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল আলম সড়ক) ধরে শুচিয়া এলাকায় যাওয়ার পথে পূর্ব জোয়ারা সংলগ্ন হারলার হাঁড়িপাড়া জ্বালিয়ে দেয় এবং এ পাড়ার কালিশংকর জলদাসের কন্যাকে ধর্ষণ করে। তখন সকাল প্রায় ১১টা। এরপর তারা পশ্চিম হারলার অনেক বাড়িঘর এবং মহাজনঘাটা সংলগ্ন মহাজন বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে শুচিয়া এলাকার মধ্যম পাড়ায় পৌঁছে। তারা এই পাড়াসহ কয়েকটি পাড়ার প্রায় ৩০০ ঘর পুড়িয়ে দিয়ে পাড়াগুলোর বাড়ি থেকে গরু-ছাগল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি লুট করে। এছাড়া মধ্যম পাড়ার ৩ জন নারীকে ধর্ষণ ও ২ জন পুরুষকে আহত করে। আহত একজনের নাম দিলিপ ভট্টাচার্য অতঃপর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা শুচিয়া এলাকার কুলালডেঙায় পৌঁছে সেখানে ৬ জন লোককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। নিহতরা হলেন যোগেশ চন্দ্র বৈদ্য (পিতা রজনীকান্ত বৈদ্য, কুলালডেঙা), যোগেন্দ্ৰ লাল মহাজন (পিতা শিবচরণ মহাজন, মহাজনপাড়া, কুলালডেঙা), উপেন্দ্রলাল শীল (শীলপাড়া, কুলালডেঙা), পাখি মহাজন (পিতা মধু মহাজন, মহাজনপাড়া, কুলালডেঙা), ফণীন্দ্রলাল ভট্টাচার্য (পিতা শশাঙ্ক ভট্টাচার্য, ভট্টাচার্য বাড়ি, কুলালডেঙা) এবং শচীন্দ্রলাল ভট্টাচার্য (পিতা বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, গবাইনজুরি, ৫নং বরমা)। পাখি মহাজনকে ধর্ষণ করার পর গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন মহাজনপাড়ার চিনু মহাজন (পিতা কুলীন মহাজন)-কেও ধর্ষণ করা হয়। তিনি এখনো জীবিত।
দ্বিতীয়বার শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা শুচিয়া গ্রামে গণহত্যা চালায়। এটি ঘটে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ঘটনার দিন দুপুর দেড়টার দিকে হানাদররা … গাছবাড়িয়া কলেজ গেট হয়ে বরকল সড়ক ধরে শুচিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। তখন শুচিয়া গ্রামে অনেকগুলো পাড়া ছিল। হানাদাররা পাড়াগুলোতে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে। বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের তাণ্ডব। এসময় অনেকগুলো ঘরবাড়ি লুট, অনেক নারীকে ধর্ষণ এবং ৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা করা হয়। শহীদদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন: নরেশ চক্রবর্তী (পিতা বিপিন চক্রবর্তী, মধ্যম পাড়া, শুচিয়া), অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস (পিতা জুনুরাম বিশ্বাস, মধ্যম পাড়া, শুচিয়া) এবং মতিলাল শীল (কুলালডেঙ্গা, শুচিয়া)। বাকি ৫ জনের একজন জনৈক নিশি মহাজনের স্ত্রী।
এ গণহত্যায় পাকহানাদার বাহিনীর দালাল, রাজাকার এবং বরকল, বরমা ও হারলা শান্তি কমিটির যারা জড়িত ছিল, তারা হলো এডভোকেট রশিদ আহমদ (কানাইমাদারি, বরকল), হাজি নুরুল ইসলাম (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ সদর), লেদু মুন্সি (ছেবন্দি, বরমা), মাওলানা ইছহাক (হারলা), নুরুচ্ছাফা সওদাগর মেম্বার (অইল্যার বড়বাড়ি, হারলা), আবদুল ওয়ারেস মেম্বার (সওদাগর বাড়ি, হারলা), মোহাম্মদ আলী মাস্টার (কেরানি বাড়ি, হারলা), শাহাব মিয়া মেম্বার (অইল্যার বড়বাড়ি, হারলা), মনির আহমদ মেম্বার (নয়াহাট, হারলা), আইয়ুব আলী (পূর্ব জোয়ারা), আবু তাহের চৌধুরী ওরফে দুধু মিয়া (পূর্ব জোয়ারা), মোহাম্মদ জকরিয়া দুলু (পূর্ব জোয়ারা), আবদুশ শুক্কুর ওরফে শুক্কুইয্যা (চন্দনাইশ সদর), মাওলানা শফিউর রহমান (মধ্যম চন্দনাইশ), হামিদুল কবির চৌধুরী ওরফে খোকা (সওদাগর বাড়ি, হারলা), মাহফুজুল কবির চৌধুরী কাঞ্চন (সওদাগর বাড়ি, হারলা), জাফর উল্লাহ (চন্দনাইশ), হাজি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মুন্সিয়া (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ), নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু (চন্দনাইশ সদর), কাঞ্চন (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ), মমতাজ (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ), আহমদ হোসেন ওরফে ছিয়া হোসেন (চন্দনাইশ), সাবের আহমদ (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ), আবদুল আজিজ চৌকিদার (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ), আবুল খায়ের চৌধুরী (মধ্যম চন্দনাইশ), নুরুল ইসলাম ওরফে বোম্বাইয়া হাজি (মধ্যম চন্দনাইশ), শামসুল ইসলাম ওরফে বাঁকা শামসু (মধ্যম চন্দনাইশ), হাবিবুর রহমান (হাজিপাড়া, চন্দনাইশ)। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!