শুভপুর ব্রিজ অপারেশন (মিরসরাই, চট্টগ্রাম)
শুভপুর ব্রিজ অপারেশন (মিরসরাই, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৬-২৮শে মার্চ। এতে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর চট্টগাম জেলার নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানি সৈন্যদের চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে কী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে চিন্তা করেন। তাঁরা শুভপুর ব্রিজ ধ্বংস করার ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কেননা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলের জন্য এ ব্রিজটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিএ দায়িত্ব নিয়ে রাতেই মিরসরাই চলে যান। জেলা সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও থানা আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি এম আর সিদ্দিকীও ব্রিজ এলাকা প্রত্যক্ষ করে আবার শহরে চলে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিএ মিরসরাই উপজেলার সংগঠকদের শুভপুর ব্রিজে হানাদার বাহিনীকে বাধা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, আবুল কাসেম, অহিদুল হক, আবদুর রউফ, আবু জাফর, আহমদ সাইদ, ফেরদৌস বারী চৌধুরী, মিহির, শাহ আলম, মির্জা ফিরোজ, নুরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, এ টি এম মিন্টু, মহিউদ্দিন রাশেদ, কাইয়ুম নিযামী, আবুল হাসেম, বেলায়েত হোসেন চৌধুরী, এম এ মান্নান, দুদু মিয়া, চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া, জাহাঙ্গীর, গিয়াসউদ্দীন, নাসির উদ্দিন, কাসেম, সুবেদার মাঈনুদ্দীন, আমিনুল হক, রেজা শাহ, আবদুল্লা চৌধুরী, রাখাল বণিক, তুষার কান্তি, জাফরউদ্দিন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ইলিয়াস, মহিউদ্দিন আহমদ, তোবারক হোসেনসহ করেরহাটের ছাত্র-যুবকরা শুভপুর ব্রিজে সমবেত হতে থাকেন। বরতাকিয়া থেকে গ্যাস নিয়ে ঝালাই দিয়ে ব্রিজের কিছুটা অংশ ধ্বংস করা হয়। একই সঙ্গে ব্রিজে তেল ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
২৬শে মার্চ দুপুরের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী কুমিল্লা থেকে এসে ব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। মিরসরাইয়ের এবাদুর রহমান, চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া, শান্তু মিয়া (বাংলা বাজার যুদ্ধে শহীদ) প্রমুখ তাদের গাদা বন্দুক দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে গুলি করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা নেট দিয়ে শুভপুর ব্রিজ পার হতে সক্ষম হয়। যাওয়ার পথে তারা রিকসা চালক আবুল কাসেমকে গুলি করে হত্যা করে। অনেকটা বিনা বাধায় এদিন হানাদাররা নদী পার হয়ে যায়।
শুভপুর ব্রিজ পার হওয়ার পর ১৩-১৪ জন্য সৈন্যকে তারা ব্রিজ পাহারা দেয়ার জন্য রেখে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩-৪ দিন পর সেখানে অপারেশন চালিয়ে পাহারারত কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে ব্রিজটি দখল করে নেন। এ- সময় বেঁচে থাকা কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিকটস্থ পাহাড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা অনেকদিন যাবৎ এ ব্রিজটি মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। এ ব্রিজ মুক্ত রাখতে মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম, নুরুল গণি ও জাকের হোসেন শহীদ হন। ১১ই জুলাই কমান্ডার নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মিরসরাই থানা থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে হেনাপুনি ব্রিজও ধ্বংস করেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড