শুভপুর ব্রিজ যুদ্ধ (ছাগলনাইয়া, ফেনী)
শুভপুর ব্রিজ যুদ্ধ (ছাগলনাইয়া, ফেনী) সংঘটিত হয় ১১ই মে। এতে প্রায় দুই কোম্পানির বেশি পাকসেনা নিহত হয়। হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হানতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সেতুর কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। হানাদার বাহিনীর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সদস্য ও অস্ত্রশস্ত্র কম থাকায় তাঁদের পক্ষে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিবাহিনী নিরাপদে ভারতীয় সীমান্তে ঢুকে পড়ে। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শুভপুর ব্রিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। বৃহত্তর নোয়াখালীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রবেশ করে ২৪শে এপ্রিল। ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত এ এলাকা ছিল হানাদারযুক্ত। তখনো পাকিস্তানি বাহিনীর এ দেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর সৃষ্টি হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা মাত্র ভারতে প্রবেশ করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা দেশে রয়েছেন তাঁরা প্রায় সবাই সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত, ছুটিরত ও পালিয়ে আসা সৈনিক। এলাকাটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী হলেও তখনো তেমন ভারী অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পৌছেনি। এমনি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম থেকে বহু পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই সামরিক যানবাহন নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী নদীর ওপর শুভপুর ব্রিজের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় বিএসএফ-এর সহযোগিতায় শুভপুর ব্রিজের একটি অংশ ধ্বংস করে দেন এবং সুবেদার ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেতুর উত্তর দিকে একটি শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শত্রুবাহিনী যাতে সহজে সেতু পার হয়ে ছালগানইয়াসহ ফেনী ও নোয়াখালীতে প্রবেশ করতে না পারে। ব্রিজটি দখল করার জন্য শত্রুবাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। কারণ চট্টগ্রাম থেকে অস্ত্র খালাস করে তারা এ ব্রিজের ওপর দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে তা সরবরাহ করবে।
শুভপুর ব্রিজের কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে হানাদার বাহিনী কামান মোতায়েন করে। কয়েকটি ট্যাংক নদীর পাড় পর্যন্ত চলে আসে। ট্যাংক ও কামানের গোলার সাহায্যে হানাদার বাহিনী কয়েকবারই নদী পার হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ভারতীয় বিএসএফ-এর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে যান। হানাদার বাহিনীও মুক্তিবাহিনীর ওপর অবিরাম শেল ছুড়তে থাকে। এভাবে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চলার পর রাতের অন্ধকারে মুক্তিবাহিনী প্রায় দুই কোম্পানির বেশি শত্রুসৈন্যকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হানতে থাকে এবং ধীরে-ধীরে সেতুর কাছাকাছি এসে পৌঁছে। দীর্ঘ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটে। এরপর কয়েক ঘণ্টা গোলাগুলি বন্ধ থাকে। হানাদার বাহিনীর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সদস্য ও অস্ত্রশস্ত্র কম থাকায় দীর্ঘ সময় যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিবাহিনী নিরাপদে ভারতীয় সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এরপর হানাদার বাহিনী দ্রুত সেতু মেরামত করে ফেনীর দিকে চলে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড