বীর প্রতীক শেখ আবদুল মান্নান
শেখ আবদুল মান্নান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্র্যাক প্লাটুন-এর সদস্য। তিনি ১৯৫০ সালের ৩রা মার্চ ঢাকার পুরাতন কচুক্ষেত এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিঘুহাট গ্রামে। তাঁর পিতার নাম এম এল শেখ এবং মাতার নাম আমেনা বেগম।
শেখ আবদুল মান্নান ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৪তম অফিসার্স শর্ট কোর্স বাছাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন। কিন্তু দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি এ চাকরিতে যোগ দেননি। রাজনীতি- সচেতন শেখ আবদুল মান্নান এ-সময় চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ বড়-বড় শহরে গণহত্যা শুরু করলে বন্ধু মনসুরুল আলম দুলাল, বীর প্রতীকএর সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা ২৮শে মার্চ ভারতের আগরতলায় চলে যান। সেখানে মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম ও মেজর এ টি এম খালেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা এসে গেরিলা দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এ দলে আরো ছিলেন বজলুল মাহমুদ, বীর প্রতীক, সিদ্দিক, আলমগীর, বাদল, আবদুল্লাহ, কটু, খালেদ প্রমুখ।
শেখ আবদুল মান্নান জুন মাসে প্রথম অপারেশন করেন গ্রিন রোডে। এদিন এক পাকিস্তানি সৈন্যর ওপর চড়াও হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে তার এসএমজি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। এ মাসেই কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তেজগাঁও কলেজে হামলা করেন। প্রবেশপত্র লুট করে এসএসসি পরীক্ষা ভুল করে দেন। তাঁরা জুলাই মাসে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ক্যাম্পে আকস্মিক হামলা করেন। এতে কয়েকজন মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগী আনসার হতাহত হয়। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে শেখ আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রিন রোড ওয়াপদা অফিসে পাকিস্তানি ক্যাম্পে অপারেশন করেন। ২১শে আগস্ট সহযোদ্ধা দুলাল, বজলুল মাহমুদ, আবদুল্লাহ, আলমগীর প্রমুখকে নিয়ে রাত একটার দিকে তিনি গ্রিন রোডে মাইন পুঁতে হোটেল নূরের দোতলায় অবস্থান নেন। রাত ২টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি জিপ ও একটি লড়ি আসামাত্র মাইনগুলো বিস্ফোরিত হয়। তখন তাঁরা একযোগে কিছুক্ষণ গুলি করে সরে পড়েন। তাঁদের হামলায় কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত এবং জিপ ও লড়ি দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ খবর বিবিসি-তে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ আবদুল মান্নানের অসামান্য সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রীর নাম খুসনুন নাহার। তাঁদের ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড