You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরগ্রাম যুদ্ধ (আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর)

শিরগ্রাম যুদ্ধ (আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর) সংঘটিত হয় ৬ই সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। এ-যুদ্ধে বেশকিছু পাকসেনা হতাহত হয়। অপরপক্ষে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন পথচারী শহীদ হন।
১৯৭১ সালে শিরগ্রাম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বোয়ালমারী থেকে শিরগ্রাম ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পরে আলফাডাঙ্গা থানা গঠিত হলে শিরগ্রাম এ থানার অন্তর্ভুক্ত হয়। আলফাডাঙ্গা থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে এ গ্রামের অবস্থান।
শিরগ্রাম ঘেঁষে বহমান বারাশিয়া নদী ছিল পাকিস্তানি সেনাদের চলাচলের পথ। তারা লঞ্চে করে এ নদী দিয়ে যাতায়াত করত। যাতায়াতের সময় তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে লুটপাট চালাত। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার তাদের লঞ্চবহরে আক্রমণ করেন। সেসব আক্রমণের সময় কিছুক্ষণ গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা স্থান ত্যাগ করতেন। এভাবে হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে শত্রুদের ভীত- সন্ত্রস্থ করার চেষ্টা হতো। কিন্ত এতে পাকসেনাদের যাতায়াত, এমনকি লুটপাটও বন্ধ হতো না। তখন বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-কাশিয়ানী থানার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের চূড়ান্তভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। পূর্বপ্রস্তুতি শেষে জলিল বিশ্বাস, সাত্তার এবং কাশিয়ানীর আক্কাস ও আহমাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা দল এ-যুদ্ধে অংশ নেয়।
মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ই সেপ্টেম্বর শিরগ্রাম গোরস্তান সংলগ্ন বারাশিয়া নদীর মধ্যে খুঁটি গেড়ে পানির নিচ দিয়ে টেলিগ্রামের তার, বাঁশ, খেজুর গাছ ইত্যাদি বেঁধে রাখেন, যাতে লঞ্চের পাখা গুঁড়িয়ে যায় কিংবা তারে পাখা জড়িয়ে লঞ্চ থেমে যায়। এদিন নদীর দুপাশে বাঙ্কার খনন করে সেখানে প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধা মেশিনগান, রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে শত্রুর অপেক্ষা করতে থাকেন। সকালে ১০-১২টি লঞ্চের বহর নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা কাশিয়ানী থেকে বোয়ালমারীর দিকে যাত্রা করে। গোরস্তানের কাছে এলে তারে পেঁচিয়ে প্রথম লঞ্চটি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন অন্য লঞ্চগুলো অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত থাকে। এ-সময় দুপাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুলো গর্জে ওঠে। জবাবে পাকিস্তানি সেনারা মর্টার ও মেশিনগান দিয়ে গুলি করতে শুরু করে। বেলা ৩টা পর্যন্ত গুলি বিনিময়ের পর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কার ছেড়ে বেরিয়ে এসে তাদের তাড়া করেন। হাজার-হাজার উল্লসিত মানুষ গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একাত্ম হয়। পাকিস্তানি সেনাদের লঞ্চবহর দ্রুত পশ্চাদপসরণ করে। এ-যুদ্ধে বেশকিছু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা মঈনউদ্দিন (টোলারচর), আতিয়ার রহমান (টোলারচর), সায়েমউদ্দিন (বানা) ও একজন পথচারী প্রাণ হারান। [আবু সাঈদ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!