শিলারবাজার যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)
শিলারবাজার যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) অক্টোবরের শেষদিকে সংঘটিত হয়।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা মোশারফ হোসেন রতন ফজলু গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আউলাপুর গ্রামে বসে শিলাবাজার যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। সকাল ৯টার দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ গ্রুপকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি গ্রুপকে উত্তরে রাওনার লাউতৈল গ্রামে সাপোর্ট হিসেবে রাখা হয়। একটি গ্রুপ দক্ষিণে ভাইলনা-ভাতুরী খেয়াঘাটে অবস্থান নেয়। আক্রমণকারী মূল গ্রুপ শিলার কাঠের ব্রিজের নিচে নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থান নেয়। হানাদার বাহিনী মশাখালী থেকে রাস্তা ধরে শিলারবাজারের দিকে মুভ করতে থাকে। এজন্য মুক্তিযোদ্ধারা শিলা ব্রিজের পশ্চিম অংশে কাঠ খুলে ফাঁদ তৈরি করে রাখেন, যাতে ব্রিজে পাকিস্তানি কনভয় দুর্ঘটনা ও বিপর্যয়ের শিকার হয়। হানাদার বাহিনী মশাখালী থেকে হাবিবুল্লাহ ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত আসামাত্র বাইলনা-ভাতুরীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দিকে গুলি ছোড়েন। পাকবাহিনী তাৎক্ষণিক তিন ভাগে ভাগ হয়ে শিলারবাজারে অবস্থানরত রতন গ্রুপের ওপর হামলা করে। তাঁরাও পাল্টা গুলি চালান। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
এ সম্মুখ যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২ জন সাধারণ গ্রামবাসী শহীদ হন। তাঁরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আউয়াল ঝানু (পিতা এয়াকুব আলী, মশাখালী), মো. ছিদ্দিকুর রহমান (মনোহরপুর, ভালুকা), মো. মনজুর মিয়া (দড়িচারবাড়িয়া, মশাখালী), মো. আবুল হোসেন (পিতা ইয়াকুব আলী, মশাখালী), মো. চাঁন মিয়া (মশাখালী) এবং মো. আবু মিয়া (৫৫) (মশাখালী) ও জগবন্ধু (৬০) (আকিয়াপাড়া)।
শহীদ ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোদ্ধা ও গ্রামবাসীদের সহায়তায় শিলারবাজারের নিকটস্থ আউলাজুর গ্রামের মো. আবুল কাশেমের জমিতে সমাহিত করা হয়, যা ‘আউলাজুর গণকবর’ নামে পরিচিত। [নিপা জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড