You dont have javascript enabled! Please enable it! শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (পবা, রাজশাহী) - সংগ্রামের নোটবুক

শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (পবা, রাজশাহী)

শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (পবা, রাজশাহী) পরিচালিত হয় অক্টোবর/নভেম্বর মাসে। এ অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা রেল লাইন উড়িয়ে দেন। ৩ দিন রাজশাহী- নবাবগঞ্জ ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার শিতলাই রেলস্টেশনের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শিতলাই গ্রামের আশপাশের গ্রামে অবস্থান নেন। পাকবাহিনীর যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এতে নেতৃত্ব দেন হারুনার রশিদ খান। অপারেশনের দিন পাকবাহিনীর একটি ট্রেন রাত ১০টায় রাজশাহী স্টেশন থেকে শিতলাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রাত ১০.৩০ মিনিটে শিতলাই ছেড়ে নবাবগঞ্জ অভিমুখে রওনা হয়। স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটি ব্রিজের কাছাকাছি গেলে এক্সপ্লোসিভের ডেটোনেটরে আগুন দেয়ার জন্য একটি গ্রুপ ব্রিজের পূর্বদিকে অবস্থান নেয়। একটি গ্রুপ ব্রিজের পশ্চিম দিকে অবস্থান করে। অন্য একটি গ্রুপ আরো পশ্চিমে অবস্থান করে। কিন্তু ট্রেনটি রেঞ্জের ভেতরে ঢোকার পূর্বেই পূর্বদিকে অবস্থানরত গ্রুপটি ম্যাচের কাঠি দিয়ে ডেটোনেটরের মাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের অনুসরণ করে আর একটি গ্রুপও ডেটোনেটরে আগুন দেয়। বিস্ফোরণে ট্রেনলাইন উড়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকসেনারা ফায়ার করতে থাকে। রেল লাইন কেটে লোহার একটি টুকরো বুলবুল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার বাম হাতে লেগে তাঁর তিনটি আঙ্গুল কেটে আলাদা হয়ে যায়। পাকসেনারা ১৫ মিনিট যাবৎ ফায়ার করে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা এর কোনো পাল্টা জবাব না দিয়ে ক্রলিং করে পেছনের দিকে সরে যান এবং আখক্ষেতের ভেতর দিয়ে নিঃশব্দে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। রেল লাইন তিন জায়াগায় উড়ে যাওয়ায় ৩ দিন রাজশাহী-নবাবগঞ্জ ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। শিতলাই রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- পাবনার বাহাদুর ও মজিবর, রাজশাহীর সাহাদত হোসেন সরকার, আব্দুস সাত্তার, আবুল হাসনাত এবং দারুশার এস এম কামরুজ্জামান, এস এম জহুরুল হক, সুশীল সরেন, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুর রহমান মাস্টার, মতিনউদ্দিন, হারেজ উদ্দিন, আমিনুল হক টুকু, মাইনুর, খোরশেদ, আলী মনসুর, মো. গফুর, শাহ জামাল খান পল্টু প্রমুখ। [হোসনে আরা খানম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড