শাসিয়ালী যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)
শাসিয়ালী যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ২৯শে জুলাই। এতে প্রায় ১৫-২০ জন পাকসেনা ও পুলিশ নিহত ও আহত হয়।
১৫ই জুলাই হাজিগঞ্জ থানার নরিংপুর যুদ্ধে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে ও ক্যাম্প হারিয়ে উন্মত্ত হয়ে পড়ে। তারা নরিংপুর, ওঘারিয়া, বগৌর, খেড়িহর, জয়নগর, মশতপাড়া, নারায়ণপুর, সেতিনারায়ণপুর প্রভৃতি গ্রামের ৩০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা মুক্তিযোদ্ধা বোরহানের বাড়ি ও ওঘারিয়া চৌধুরীপাড়া বাজার পুড়িয়ে দেয় এবং বগৌর পাটোয়ারী বাড়ির ডা. সুলতানের বৃদ্ধ মাতাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে।
২৯শে জুলাই পাকবাহিনী খবর পায় যে, মুক্তিযোদ্ধারা শাসিয়ালী হাজী বাড়িতে অবস্থান করছেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। তাঁদের একজন ছিলেন ওপি (আউট পোস্ট) ডিউটিতে। হঠাৎ তিনি খবর নিয়ে আসেন যে, ১৫-১৬ খানা নৌকায় করে পাকবাহিনী পালতালুক হয়ে শাসিয়ালীর দিকে আসছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্লাটুন কামালপুর ও একটি প্লাটুন পাটোয়ারী বাজারের দিকে দ্রুত চলে যায় এবং পজিশন নেয়। এমন সময় খবর আসে যে, পাকবাহিনীর আর একটি দল আনন্দবাজার হয়ে কড়ইতলী পর্যন্ত এসে গেছে। তারা সংখ্যায় প্রায় ৩০-৩৫ জন। এ গ্রুপটি কামালপুরের দিকে আসছে। পাকবাহিনীর আগমন দেখে জনগণ জানমাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছে। হাজী বাড়ির গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার রব। পাকবাহিনী হাজী বাড়ির কাছে এসে কেউ-কেউ নৌকা থেকে নেমে খালপাড় দিয়ে হেঁটে আসছে। বাকিরা নৌকায়। তারা কোনো সাড়া- শব্দ বা গোলাগুলি করছে না। তাদের পরিকল্পনা তারা অতর্কিতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করবে। কিন্তু তারা মুক্তিযোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসার সঙ্গে-সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হঠাৎ আক্রমণে নৌকায় থাকা কয়েকজন পাকসেনা পানিতে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। পেছনের ৭-৮ খানা নৌকার পাকসেনারা পালতালুক রাস্তায় উঠে একটানা বৃষ্টির মতো গুলি করা শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা থেমে-থেমে গুলি করছেন। এভাবে বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে প্রায় ১৫- ২০ জন পাকসেনা ও পুলিশ নিহত ও আহত হয়। পাকসেনারা নিহত ও আহতদের নিয়ে চাঁদপুরে চলে যায়। [দেলোয়ার হোসেন খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড