You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম

শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম, বীর বিক্রম (১৯৫৩- ১৯৭১) ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালের ২০শে নভেম্বর শেরপুর জেলার অন্তর্গত শ্রীবর্দী উপজেলার কাকিলাকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ মো. মোশারফ হোসেন এবং মাতার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। ৪ ভাই ও ৭ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তিনি শেরপুর জি কে পি এম ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং রংপুর সরকারি কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করে শেরপুর কলেজে বিএসসি- তে ভর্তি হন। ৭১-এ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিলের শেষদিকে তিনি ভারতের মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্প থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর জামালপুরের কামালপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটির দখল নেয়ার জন্য ১৪ই নভেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর তাহেরের নেতৃত্বে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে অংশ নেন। মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় কামালপুরকে মুক্ত করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কামালপুর থেকে শ্রীবর্দীর নালিতাবাড়ি হয়ে শেরপুরে প্রবেশ করেন। পথে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। ৭ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে শেরপুর শত্রুমুক্ত করেন। শেরপুর মুক্ত করে মিত্রবাহিনীর গাইড হয়ে চরাঞ্চল দিয়ে জামালপুরের দিকে অগ্রসর হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেরপুর ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরাজিত হয়ে শেরপুরের শেষ সীমান্ত জামালপুরের গুদারাঘাট এলাকায় তাদের ঘাঁটি পিটিআই ভবনে আশ্রয় নেয়। মিত্রবাহিনী ও সহযোদ্ধাদের নিয়ে শাহ মুতাসিম বিল্লাহ ৯ই ডিসেম্বর জামালপুরের গুদারাঘাট এলাকায় প্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মূল ঘাঁটির চারদিক ঘিরে ফেলেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি বেলটিয়া গ্রামে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বুঝতে পেরে ১০ই ডিসেম্বর ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় ৷ যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি বাংকার থেকে বের হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ করে স্টেনগান থেকে গুলি ছোড়েন। এ-সময় পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে তিনি শহীদ হন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মোৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররমকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড