You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক শাহজাহান মজুমদার - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক শাহজাহান মজুমদার

শাহজাহান মজুমদার, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৬) কলেজে অধ্যয়নকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। দিনাজপুর সদরের কালিতলায় ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রজব আলী মজুমদার ও মাতার নাম সায়েরা মজুমদার। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকার জিন্নাহ কলেজ (বর্তমানে তিতুমীর কলেজ)-এ ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শাহজাহান মজুমদার এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হবিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সদর দপ্তর তেলিয়াপাড়ায় যান এবং মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বাধীন ২য় ইস্ট বেঙ্গলের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
অতঃপর ৩নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম এ মতিনের অধীনে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন। চুনারুঘাটে অবস্থানরত পাকবাহিনীর সাহায্যার্থে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রায় দু কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্য আসার সংবাদ পেয়ে ১৬ই মে লেফটেন্যান্ট হেলাল মুর্শেদ তেলিয়াপাড়া চা বাগানের নিকটবর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি অপারেশন পরিচালনা করেন। এ অপারেশনে শাহজাহান মজুমদারসহ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। মহাসড়কের ৮১নং মাইল পোস্টের নিকট (বর্তমানে সেখানকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বিলুপ্ত) এম্বুশ করার জন্য তাঁরা প্রথমে রাস্তা খুঁড়ে বিচ্ছিন্নভাবে চারটি ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে সেখানে আলকাতরা ঢেলে দেন। রাস্তায় ছড়ানো আলকাতরার ওপর গাড়ির টায়ারের দাগ বসিয়ে দেন। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি কনভয়ের অপেক্ষায় পাশের জঙ্গলে ওঁৎ পেতে থাকেন।
এক পর্যায়ে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে পাকসেনা ও তাদের রসদবাহী গাড়ির বিশাল কনভয়টি আসতে দেখা যায়। বহরের প্রথমে একটি জিপ, এরপরে কয়েকটি ট্রাক এবং একটি বাস ছিল। সামনের জিপটি মাইনের ওপর দিয়ে চলে যায়, কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটেনি। শাহজাহান মজুমদার তাঁর এসএমজি-র ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন বিস্ফোরণ ঘটামাত্র গুলি ছুড়বেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ট্রাকের চাকা মাইনের ওপর ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। একই সঙ্গে আরো একটি বিস্ফোরণ ঘটে। পরপর দুটি বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয় দুটি ট্রাক। আকস্মিক এ বিস্ফোরণে হতচকিত হয়ে পেছনের গাড়িগুলো থেমে যায়। এসব গাড়িতে থাকা পাকসেনারা দ্রুত নেমে পাশের একটি উন্মুক্ত স্থানে একত্রিত হয়। তার পাশেই মুক্তিযোদ্ধারা ওঁৎ পেতে বসেছিলেন। সুযোগ পেয়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকসেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এতে সেখানে একত্রিত হওয়া প্রায় সকল পাকসেনাই নিহত হয়। পেছনে থেকে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা একদল সেনা যোগ দেয়। ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরে যান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শাহজাহান মজুমদারকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর শাহজাহান মজুমদার তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে পরিসংখ্যানে অনার্স ডিগ্রি নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় ১৮ বছর চাকরি করেন। এরপর একটি ইনফরমেশন সিস্টেম কোম্পানির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। শাহজাহান মজুমদার গেরিলা নামে একটি বই লিখেছেন। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নুরুন নাহার। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড