You dont have javascript enabled! Please enable it!

শাহপুর গড় যুদ্ধ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

শাহপুর গড় যুদ্ধ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২২শে নভেম্বর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত শাহপুর গড়। এখানে ২২শে নভেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামান এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়, তবে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২২শে নভেম্বর পাকবাহিনীর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট দলদলী সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল মহানন্দা নদীর অপর তীরে আলীনগরে। মুক্তিবাহিনীর দলটির অধিনায়ক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রায়হান। আলমপুর- কায়াসাবাড়ি প্রতিরক্ষা অবস্থানের অধিনায়ক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন। আর শাহপুর গড়ের প্রতিরক্ষা অবস্থানের অধিনায়ক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নায়েক ওয়াশিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসি শেষবর্ষের ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা সানোয়ার এখানে অবস্থান করছিলেন। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের ডানদিকে শাহপুর গড় এলাকায় পাকসেনারা আক্রমণ করে। এ অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। শাহপুর গড় থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পশ্চাদপসরণ করে দলদলীতে চলে যান। বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা নদী অতিক্রম করে আলীনগরে যান। পাকসেনারা অতি সহজেই শাহপুর গড় দখল করে নেয়। আলমপুর-কায়সাবাড়ি প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করা হয়। মুক্তিবাহিনীর দুটি ৮১ মিলিমিটার মর্টারের একটি আলীনগরে অন্যটি কায়সাবাড়িতে ছিল। মুক্তিবাহিনী সারাদিন মর্টারের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অগ্রবর্তী দল আলমপুর আম্রকাননের পূর্ব প্রান্তে অবস্থান গ্রহণ করে পাকসেনাদের অগ্রযাত্রা রোধ করে। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামান ওয়ারলেসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা লে. রফিকের সঙ্গে কথা বলেন। শাহপুর গড় থেকে মুক্তিবাহিনীর পশ্চাদপসরণে তিনি ক্রুদ্ধ হন। তিনি অবিলম্বে পাল্টা আক্রমণ করার জন্য লে. রফিককে নির্দেশ দেন। কর্নেল জামানের নির্দেশ অনুযায়ী সেদিন রাত ১-৩০ মিনিটে মুক্তিবাহিনী শাহপুর গড়ে পাল্টা আক্রমণ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর মেহেদীপুর থেকে তাঁর বাহিনী নিয়ে নৌকায় খাল অতিক্রম করে শাহপুর গড়ের পূর্ব কোণে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে শত্রুরা শিবরামপুর, রহনপুর ও শাহপুর গড়ে একযোগে কামানের গোলাবর্ষণ শুরু করে। সঙ্গে-সঙ্গে আলীনগর- মকরমপুর প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে মুক্তিবাহিনীর ৮১ মিলিমিটার মর্টার গর্জে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে শিবরামপুর ব্রিজের অপর প্রান্তে অবস্থিত পাকিস্তানিদের অবস্থান ও রহনপুরে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকে। মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পাকবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের বাহিনী পূর্বকোণ থেকে শাহপুর গড়ে আক্রমণ চালায়। লে. রফিক, নজরুল, আলতাফ ও ওয়াশিল অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে শাহপুর গড়ের সম্মুখ ও পশ্চিম দিক থেকে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর পাকসেনারা শাহপুর গড় ছেড়ে বিষ্ণুপুর ও কসবা এলাকায় পালিয়ে যায়। শাহপুর গড় যুদ্ধে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ-যুদ্ধে আহমেদ রেজা, জামির আলী, শামসুদ্দীন, গফুর, আমিন আলী, ওয়াশিল, দুলুর রহমান, আলতাফ হোসেন, সালাউদ্দীনসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। [মাযহারুল ইসলাম তরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!