You dont have javascript enabled! Please enable it!

শালীহর গণহত্যা (গৌরীপুর, ময়মনসিংহ)

শালীহর গণহত্যা (গৌরীপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ২১শে আগস্ট। এদিন পাকসেনারা গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তারা অনেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং অনেককে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। একজন মুক্তিযোদ্ধার পিতাকে তারা ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি। শালীহর গ্রামে একটি গণকবর রয়েছে।
২১শে আগস্ট বিসকা রেলস্টেশনের মাস্টার অবাঙালি সলিম উদ্দিন পাকসেনাদের নিয়ে পশ্চিম শালীহর গ্রামে আসে। তারা গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্র করের বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে এসে থামে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জ্ঞানেন্দ্র কর পাকিস্তানি সেনাদের দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে একটি কদম গাছে উঠে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। হানাদাররা তাকে দেখে গুলি করে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি নিহত হন। এরপর তার বাড়িতে ঢুকে ঘরের বারান্দায় বসা জ্ঞানেন্দ্রের চাচাতো ভাই মোহিনী মোহন করকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদাররা তাদের বাড়ি আগুন ধরিয়ে ভস্মীভূত করে দেয়। পাকিস্তানি সেনারা সজল কুমার হোমের বাড়িতে আগুন দেয়। এরপর উত্তরদিকে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় যায়। পথে নবর আলীকে তার বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা শালীহর গ্রামের হিন্দুপ্রধান উত্তর পাড়ায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। হানাদারদের গুলিতে সেদিন এ পাড়ায় রামেন্দ্র চন্দ্র দাস, স্বরূপ চন্দ্র দাস, কৈলাস চন্দ্ৰ দাস, শত্রুঘ্ন দাস, কামিনী কান্ত দাস, তারিণী মোহন দাস, শচীন্দ্র চন্দ্র দাস, ক্ষীরদা সুন্দরী, যোগেশ চন্দ্র পণ্ডিত, দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস, রামমোহন সরকার ও জ্ঞানেন্দ্র কর নিহত হন। তারা এ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায়ের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
পাকসেনারা এদিন মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশিমের বাড়ি থেকে তাঁর পিতা ছাবেদ হোসেনকে ধরার চেষ্টা করে। তাঁকে না পেয়ে বাড়ির সকল বয়স্ক পুরুষসহ আশপাশের সকল বাড়ির পুরুষদের আটক করে। সবাইকে গলায় দড়ি বেঁধে পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভিটেয় জড়ো করে। এক পর্যায়ে তাদের গুলি করে হত্যার করার জন্য লাইনে দাঁড় করায়। এতগুলো মানুষের জীবনের কথা ভেবে লুকিয়ে থাকা ছাবেদ হোসেন বেরিয়ে আসেন। পাকসেনারা তাঁকে আটক করে। এরপর ধরে আনা প্রতিটি মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কেউ-কেউ নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারান। এরপর হানাদাররা নির্যাতিতদের ছেড়ে ছাবেদ হোসেনকে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।
জ্ঞানেন্দ্র কর ও তার চাচাতো ভাই মোহিনী মোহন করকে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় একটি গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়। নবর আলী ছাড়া বাকিদের ঘটনাস্থলে গণকবর দেয়া হয়। নবর আলীকে তার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। শালীহর গণহত্যায় যারা শিকার তাঁদের স্মরণে গণকবরের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!