You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক শামসুল হক

শামসুল হক, বীর প্রতীক (১৯৪১-২০১৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪১ সালের ১২ই মার্চ ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল লতিফ এবং মাতার নাম সুফিয়া বেগম। শামসুল হক বৈরাগী হাট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিটার পদে চাকরিতে যোগ করেন। সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরিরত অবস্থায় শামসুল হক নারায়ণগঞ্জ ও আদমজি এলাকায় অবাঙালিদের অন্যায় আচরণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হন। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবাঙালিদের প্রচণ্ড দাপট ও বাঙালিদের প্রতি তাদের অমর্যাদাকর ব্যবহার অন্য বাঙালি ছাত্র-যুবক-শ্রমিকদের মতো শামসুল হককেও ক্ষুব্ধ করে। ৭০-এর নির্বাচনে বিজয় লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় নারায়ণগঞ্জ এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সিদ্দিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত সকল মিছিল ও সমাবেশে শামসুল হক অংশ নেন। ঢাকায় গণহত্যা শুরু হলে তিনি ও তাঁর ছোট ভাই নূরুল হক, বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এপ্রিল মাসে ভারতে গিয়ে তাঁরা ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দিয়ে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁর ভাই নূরুল হক তখন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন। তাঁদের দুজনকে মেলাঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিস্ফোরক স্থাপন ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শত্রুপক্ষের ক্ষতি সাধন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাকিস্তানিরা এক সময় বাঙালি সরকারি চাকরিজীবীদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানায় এবং যারা যোগ দেবে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেক্টর কমান্ডারের পরামর্শে শামসুল হক ও নূরুল হক সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। তাঁরা অক্টোবর মাসে একবার সিদ্দিরগঞ্জ কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। পরে ৪ঠা নভেম্বর নূরুল হক তাঁর গাড়ি দিয়ে প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য কেন্দ্রের মেশিন রুমে আনার ব্যবস্থা করেন। শামসুল হক প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে এসব বিস্ফোরক মেশিন রুমে স্থাপন করেন। গভীর রাতে প্রচণ্ড শব্দে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটে। সমগ্র নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বৃহৎ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ অপারেশন সফল হওয়ার পর শামসুল হক পালিয়ে ভারতে চলে যান। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তিনি ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সরকার শামসুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর শামসুল হক সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করে ২০০০ সালে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালের ১৪ই মার্চ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পারিবারিক উদ্যোগে শামসুল হক ও নূরুল হকের স্মরণে তাঁদের গ্রামে একটি শহীদবেদি নির্মিত হয়েছে। শামসুল হক ৪ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!