You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে 'চার খলিফা' খ্যাত ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতম শাজাহান সিরাজ - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে ‘চার খলিফা’ খ্যাত ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতম শাজাহান সিরাজ

শাজাহান সিরাজ (১৯৪৩-২০২০) ‘চার খলিফা’ খ্যাত ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতম, ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক, করটিয়া সা’দত কলেজ ছাত্র সংসদের ২ বার নির্বাচিত ভিপি, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর অন্যতম নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্র-জনতার সমাবেশে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠক, স্বাধীনতোত্তর বিরোধী দল জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বিএনপি-তে যোগদানকারী এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী।
১৯৪৩ সালের ১লা মার্চ টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকায় শাজাহান সিরাজের জন্ম। তাঁর পিতার নাম আব্দুল গনি মিয়া ও মাতার নাম রহিমা বেগম। পিতা ছিলেন পেশায় উকিল। পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার গোহাইল বাড়ি গ্রামে।
শাজাহান সিরাজের শিক্ষাজীবন শুরু টাঙ্গাইলের আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানেই ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে মেট্রিকুলেশন এবং সা’দত কলেজ, করটিয়া থেকে ১৯৬১ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। একই কলেজ থেকে তিনি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৭১ সালে এলএলবি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
স্কুল-জীবন থেকেই শাজাহান সিরাজ রাজনীতি-সচেতন হয়ে ওঠেন। কলেজে অধ্যয়নকালে আইয়ুব শাসন আমলে ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৬৪-র হামুদুর রহমান শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তখন তিনি সা’দত কলেজের ভিপি (১৯৬৪-১৯৬৫)। পরের বছর (১৯৬৬-১৯৬৭)ও তিনি ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক, ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৭০- ১৯৭২ সময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন (সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী)। বঙ্গবন্ধুর ৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ৬৮-র আগরতলা মামলাবিরোধী আন্দোলন, ৭০-এ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনী প্রচার, ৭১-এর ২- ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক -অসহযোগ আন্দোলন-, ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা প্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা শুরু ও ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে-সঙ্গে পাকস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ পল্টনের ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে “স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ’ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অনন্য ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি মুজিব বাহিনী-র সহ- আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন।
স্বাধীনতোত্তরকালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ বের হয়ে এসে ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা করে। শাজাহান সিরাজ ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরবর্তীতে জাসদ বহুধা বিভক্ত হলে তিনি একটি অংশের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বিএনপি-তে যোগদান করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ (মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বচন), ২০০১ সাল মোট ৩ বার তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। দুবার তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে ১৪ই জুলাই ২০২০ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী রাবেয়া সিরাজও রাজনীতিতে সক্রিয়। তাঁদের ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড