স্থানীয় মুক্তিবাহিনী শান্তি গুহ বাহিনী (চিতলমারী, বাগেরহাট)
শান্তি গুহ বাহিনী (চিতলমারী, বাগেরহাট) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন বামপন্থী রাজনীতিবিদ শান্তি রঞ্জন গুহ (পিতা বুদ্ধিমন্ত গুহ; পাঙ্গাশিয়া, ইউনিয়ন হিজলা, চিতলমারী)। সুবক্তা ও সাহসী হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। বামপন্থী রাজনীতির অনুসারী এবং জেলা ন্যাপ (মোজাফফর)-এর সহ-সভাপতি শান্তি গুহ প্রাদেশিক পরিষদে কুড়েঘর প্রতীকে নির্বাচন করেন। তিনি এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
শান্তি গুহ ১৯৭১ সালের মার্চে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নাসির আহম্মেদের সঙ্গে পরামর্শ করে বোয়ালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি প্রশিক্ষণ শিবির খোলেন। তিনি ছিলেন এ ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক। এখানে ৬০ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠি এলাকার (আটঘর-কুড়িআনা ‘পেয়ারা বাগান) একটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে শশাংক পালের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল পিছু হটে নাজিরপুরের মাঠিভাঙ্গা হয়ে শান্তি গুহের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তিনি এ মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। এঁদের কয়েকজন ও এলাকার কিছু ছাত্র-যুবককে নিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য শান্তি গুহ ভারতে যান। তাঁর সঙ্গে পূর্ব থেকেই সবুর বাহিনী প্রধান এস এম এ সবুরের রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিল। এস এম এ সবুর প্রশিক্ষণের জন্য আসামের তেজপুরে গেলে শান্তি গুহ মণি সিংহ এবং মোজাফফর আহমদের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করেন। তিনি অশোকনগর ও বনগাঁ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং ক্যাম্পে তরুণ-যুবকদের উদ্ধুদ্ধকরণ কাজে অংশ নেন।
শান্তি গুহ ১২ই ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ থেকে লঞ্চে সুরন্দবনের মধ্য দিয়ে শতাধিক রাইফেল ও গ্রেনেডসহ চিতলমারীতে তাঁর শ্বশুর সুন্দর হীরার বাড়িতে অবস্থান নেন। সবুর বাহিনী বাগেরহাটে পৌছলে শান্তি গুহ তাঁর বাহিনী নিয়ে বাগেরহাটে এ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হন। শান্তি গুহের বাহিনী এলাকার মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বাহিনীর সদস্যরা সবুর বাহিনীর সঙ্গে মিলে পাকবাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা করেন। ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি শান্তি গুহ বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দেন। [মনীন্দ্র নাথ বোস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড