বীর প্রতীক শহীদুল্লাহ
শহীদুল্লাহ, বীর প্রতীক (মৃত্যু ২০০২) ৩নং সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল জলিল মিঞা এবং মাতার নাম আমিনা খাতুন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈনিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এ তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উদ্বুদ্ধ হন। ৭১-এর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সস্ত্রশস্ত্র আক্রমণ এবং বিভিন্ন ক্যান্টমেন্টে বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র বা হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টর এবং এরপর ‘এস’ ফোর্সে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কসবাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর মোকাবেলা করেন। ৩০শে নভেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যে তীব্র লড়াই চলে, তাতে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। অবশেষে শত্রুর হাত থেকে আখাউড়া মুক্ত হয়। ৮ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সিঙ্গার বিলের যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন। কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাতের অন্ধকার ও কুয়াশা ভেদ করে সিঙ্গার বিলের উদ্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যান। একটি দলে ছিলেন শহীদুল্লাহ। ভারতীয় মাউনটেন্ট ডিভিশনের মিত্রসেনাদের কামানের গোলাবর্ষণের সহায়তায় এখানে মুক্তিসেনা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। অবশেষে ভোররাতে পাকসেনারা তাদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে সিঙ্গার বিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নায়েক শহীদুল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোছা. সায়েস্তা বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড