শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম স্মৃতি কমপ্লেক্স (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)
শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম স্মৃতি কমপ্লেক্স (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের পাদদেশে জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহাসিক জনপদ কামালপুর ইউনিয়ন। এখানে ১৯৭১ সালে ইপিআর ক্যাম্পে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এ ঘাঁটিতে পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। এখানকার বধ্যভূমিতে অসংখ্য নারী-পুরুষকে নির্যাতন শেষে হত্যার পর গণকবর দেয়া হয়। এ কামালপুর ঘাঁটির পতন ঘটে কামালপুর যুদ্ধের পর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে স্মৃতিস্তম্ভসহ একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়।
কামালপুর বাজার সংলগ্ন বর্তমান বিজিবি ক্যাম্পের মাঠের শেষ প্রান্তে স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এটি উদ্বোধন করেন। শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম ও কামালপুর যুদ্ধ স্মরণে এ স্মৃতিস্তম্ভ এবং কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়। ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী এটি নির্মাণ করেন। তিন ফুট প্রাচীর বেষ্টিত উড়ন্ত পায়রার আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভের সম্মুখভাগে একটি স্বচ্ছ জলেভরা চৌবাচ্চা আছে। চৌবাচ্চার ফুটন্ত লাল পদ্মগুচ্ছ যেন রক্তাক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিচ্ছবি। মূল বেদীর সামান্য নিচের অংশে কামালপুর রণাঙ্গনের বিভিন্ন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বর্ণনা রয়েছে। এর সঙ্গে ৬৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা পাথরে উৎকীর্ণ করা হয়েছে। কামালপুর রণাঙ্গনের সামরিক মানচিত্র এবং শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী মোজাইক পাথরে খোদাই করা আছে। বেদীর পেছনের দেয়াল জুড়ে রয়েছে ৭১-এর যুদ্ধদৃশ্য এবং স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতিকৃতি। স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে একটি ফলকে লেখা আছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবিস্মরণীয় কবিতার পংক্তি, যা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল-
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।
[রজব বকশী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড