শর্ষিনা যুদ্ধ (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর)
শর্ষিনা যুদ্ধ (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) ২২শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর দুর্গ হিসেবে খ্যাত শর্ষিনা পীরের বাড়ির এ-যুদ্ধ ৪ দিন স্থায়ী হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মুক্তিবাহিনী শর্ষিনার রাজাকার বদরবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে, যা অব্যাহত ছিল বিজয়ের পরও অর্থাৎ ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জাহাঙ্গীর বাহাদুরের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ, কাজী মতিয়ার রহমান (মতি কাজি) ও হায়দারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ, নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং বেনুলাল দাসগুপ্তের নেতৃত্বে বানারীপাড়া থেকে আসা একটি গ্রুপ এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
২২শে নভেম্বর রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর দুর্গ হিসেবে খ্যাত শর্ষিনা পীরের বাড়িতে প্রথম হামলা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এদিন ফিল্ড কমান্ডার রাজার নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর বাহাদুরের একটি গ্রুপ স্বরূপকাঠিতে অবস্থান নেয়। কাজী মতিয়ার রহমান (মতি কাজি) ও হায়দারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পীরের বাড়ির উত্তরে অবস্থান গ্রহণ করে। নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পীরের বাড়ির পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করে। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন ফারুক, হাফেজ মাহমুদ, আবদুস সালাম মিন্টু। বেনুলাল দাসগুপ্তের নেতৃত্বে বানারীপাড়া থেকেও একটি গ্রুপ এসে যোগ দেয়। ৪ দিন স্থায়ী হয় যুদ্ধ। রাজাকার বাহিনী শর্ষিনার বিভিন্ন স্থাপনার ভেতর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রদত্ত আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে। এ-যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা কাজী মতিয়ার রহমান (সলিয়া বাকপুর, বানারীপাড়া) এবং মো. আনসার উদ্দিন (কাউখালী) শহীদ হন। যুদ্ধ চলাকালে কাজী মতিয়ার রহমান রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ পীরের বাড়ির পোস্ট অফিসের খালে (ঘোষের বাড়ি খাল) ফেলে দেয়া হয়।
১৬ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলেও স্বরূপকাঠিতে তখনো রাজাকারআলবদর বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা শর্ষিনা পীরের বাড়ির রাজাকার দুর্গের সঙ্গে লড়াই করে যান। অবশেষে বিজয়ের ২দিন পর শর্ষিনার রাজাকারআলবদর বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৮ই ডিসেম্বর স্বরূপকাঠি শত্রুমুক্ত হয়। [হাবিবুল্লাহ রাসেল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড